হোমআন্তর্জাতিক"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি"

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি”

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি”

bikash palডঃ বিকাশ পাল, লন্ডন-প্রবাসী গবেষক-অধ্যাপক

আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ আজকের দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা বিশ্বে আজ মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। তবে এর এক রক্তাক্ত কিন্তু গৌরবময় ইতিহাস আছে। ১৯৫১-৫২ সালে পাকিস্তানের একমাত্র সরকারি ভাষা হল উর্দু। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রের তরফে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হল না। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তা মেনে নিলেন না। কেন না তাঁরা আগে বাঙালি, পরে পাকিস্তানী। বাংলা ভাষা তাঁদের প্রাণ, এই ভাষাতেই তারা হাসে, কাঁদে আর গায়। অতুলপ্রসাদ সেন লিখেছিলেন, “মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা।”

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় বেরোল প্রতিবাদ মিছিল, যার পুরোভাগে ছিল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। সরকারি সেনা সেই মিছিলে নির্মমভাবে গুলি চালাল। রফিকউদ্দিন আহমেদ, আবুল বরকত, আব্দুল জব্বর, আব্দুস সালাম নামের তরতাজা পাঁচটি ছাত্রের প্রাণ গেল। আমরা অনেকেই প্রাণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি। আর এঁরা সেদিন বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে প্রাণ দিলেন। আমি একবার ঢাকার শহিদ মিনারে গিয়ে আমার প্রণাম জানিয়ে এসেছি।

এই ভাষা আন্দোলন দিয়েই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালির স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার শুরু। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে জন্ম নিল এক স্বাধীন রাষ্ট্র – বাংলাদেশ। ভাষার জন্য একটি দেশের জন্ম, বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম। আমার পূর্বপুরুষ এপার বাংলার। তাঁদের এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি। তবে আমি ছোট থেকেই বাংলাদেশ আর তার মানুষকে ভালোবাসি।

গত ২০-২৫ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। আমি ৭-৮ বছর পর পর যাই। তাই পরিবর্তন সহজেই আমার চোখে ধরা পড়ে। পদ্মার দুই তীরে দুই জেলা মুর্শিদাবাদ (ভারত) আর রাজশাহী (বাংলাদেশ) – এই দুই জেলার সদর শহরের উপগ্রহ চিত্র বা আকাশ রেখা দেখলেই বোঝা যায় বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে আর্থ সামাজিক দিক থেকে ।

স্কুলে পড়ার সময় আমরা স্কুলের এক শিক্ষকের বাড়িতে দূরদর্শনে ক্রিকেট খেলা দেখতে যেতাম। তিনি বিরতির সময় বাংলাদেশের খবর চালাতেন। খবরের শুরুর আগে একটি সুন্দর গান বাজত সাবিনা ইয়াসমিনের গলায়। তিনি তখন গায়িকা হিসেবে বেশ নাম করেছেন। গানটির শুরুর দিকের কয়েকটি লাইন মনে আসে প্রায়ই , বিশেষ করে প্রতিবছর ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে।

“সবকটা জানালা খুলে দাও না
আমি গাইবো গাইবো বিজয়েরই গান
ওরা আসবে, চুপি চুপি
যারা এই দেশটাকে
ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ
সবকটা জানালা খুলে দাও না”

এ গানের জন্মের বহু আগেই ভাষা আন্দোলন হয়েছে। ভাষা শহিদদের আত্মবলিদানকে সম্মান জানাতেই এই গান অনেক পরে লেখা হয়েছে। বেশ ভালো লাগে এই গানের কথা আর সুর। আব্দুলদের জন্য আমার বুক বাঙালি হিসেবে গর্বে ভরে ওঠে। আজ এই মাতৃভাষা দিবসে ঐ মহান শহিদদের আমার বিনম্র প্রণাম। আর বিশ্বের নানান দেশে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি ভাই বোনেদের আমার শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img