হোমPlot1সাবধান! সুন্দরীর ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেলিং, সক্রিয় ভরতপুর গ্যাং

সাবধান! সুন্দরীর ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেলিং, সক্রিয় ভরতপুর গ্যাং

সাবধান! সুন্দরীর ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেলিং, সক্রিয় ভরতপুর গ্যাং

(CRIME REPORTER : এই পর্বে শোনানো হবে নানান অপরাধ কাহিনী। বিভিন্ন রহস্যজনক ঘটনার নেপথ্য কাহিনী। বিখ্যাত গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর তদন্তের রোমহর্ষক গল্প। বিভিন্ন দেশের গুপ্তচর সংস্থাগুলোর গোপনে খবর সংগ্রহের গল্প আড্ডার মত করে উঠে আসবে বিশিষ্ট সাংবাদিক হীরক কর -এর কলমে।)

হীরক কর : রবিবারের দুপুর। হঠাৎ কলকাতার এক বর্ষীয়ান সাংবাদিকের মোবাইলে টুং টাং আওয়াজ। মেসেঞ্জারে এল একটি মেসেজ, ‘কল মি’। ‌ প্রবীণ খুব ভালো করে দেখলেন। এক সুন্দরী মহিলার মুখ। মহিলার বয়স ২৪-২৫ হবে। নাম দেখলেন স্বপ্না চৌহান। বর্ষীয়ানকে হোয়াটসঅ্যাপে আসতে বলা হলো। কৌতূহলবশত তিনি হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে হাই করলেন। মহিলা ছবি পাঠাতে বললেন। তারপরেই কল করার আহ্বান। প্রবীণ সাংবাদিক জানালেন তিনি এখন অফিসের কাজে ব্যস্ত। ‌ তাতে মহিলার যেন একটু অভিমান হল। ‌ তিনি বললেন, ‘ফটো ভেজো না’।‌ ফটাফট মহিলার চারটি ছবি ঢুকে গেল প্রবীণের হোয়াটসঅ্যাপে। মহিলা জানালেন, তিনি ‘অ্যালোন’।‌ প্রবীণকে বললেন ‘গো টু বাথরুম’। এরপরেই আসতে থাকে হোয়াটসঅ্যাপ কল। তারপরেই বলা হয় প্যান্ট খোলার কথা। আতঙ্কিত প্রবীণ সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল নম্বরটি ব্লক করে দিলেন। ফোন করে জানালেন আমাকে। বললাম, এ তো ভরতপুর গ্যাংয়ের কাজ।

এতদিন তো জামতারা গ্যাংয়ের কথা শোনা গেছিল। কিন্তু ভরতপুর গ্যাং? সাম্প্রতিককালে কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাজস্থানের ভরতপুর গ্যাং। এটিএম কার্ড জালিয়াতি ও প্রতারণায় জামতারা গ্যাংয়ের নাম উঠে এসেছে বারবার। পাশাপাশি এটিএম থেকে টাকা লুটের ঘটনায় হরিয়ানার মেওয়াট গ্যাংয়ের দেশজোড়া খ্যাতি রয়েছে। সেইভাবেই ভিডিও কলের মাধ্যমে সুন্দরী মহিলার নগ্ন ছবিকে হাতিয়ার করে এখন এ রাজ্যের পুরুষদের ফাঁদে ফেলে টাকা লুট করছে ভরতপুর গ্যাং।

প্রোমোটার, ডাক্তার, আইটি প্রফেশনালদের মত মোটা টাকার মালিকরা এর শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সামাজিক লজ্জার ভয়ে কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন না। অতীতে একটি কেনাবেচার অনলাইন সাইটে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির কারবার করত এই ভরতপুর গ্যাং। একসময় আইপিএস অফিসারদের ফেসবুক প্রোফাইল জাল করে টাকা আদায় করছিল এই গ্যাংটি। সুন্দরী মহিলাদের নগ্ন ছবিকে হাতিয়ার করে ব্ল্যাকমেইল করার ক্ষেত্রে প্রথম আত্মঘাতী হন টালিগঞ্জের অভিনেতা অঙ্কুশের আপ্ত সহায়ক  পিন্টু দে।

গত ২ মার্চ নারকেলডাঙ্গা থানা রোডের নিজের বাড়িতে জানলার গ্রিলে ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন ৩৬ বছরের এই বাপ্পা বা পিন্টু দে। প্রায় দশ বছর ধরে অঙ্কুশের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন বাপ্পা। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় মানসিক আঘাত পান অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহায়ক এভাবে আত্মঘাতী হওয়ায় ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন অঙ্কুশ।এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতে অভিনেতার পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়।

পরে বাপ্পার পরিবারে, তাঁর দিদির  লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আইপিসি ৩৮৫ ধারায় তোলাবাজি, ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনা, ৪৬৫ ধারায় জালিয়াতি, ১২০বি ধারায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্তে নামেন কলকাতা পুলিশের সাইবার থানার গোয়েন্দারা। তদন্তে রাজস্থানের ভরতপুর গ্যাংয়ের নাম উঠে আসে। এরপরই লালবাজারের গোয়েন্দাদের একটি দল পৌঁছে যায় ভরতপুর। গ্রেফতার করা হয় ভরতপুর গ্যাংয়ের মূল পান্ডা আইয়ুব খানকে।

এই ঘটনায় আইয়ুবের ১৬ বছরের ছেলেও জড়িত বলে অভিযোগ। সে পালিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। এই ষড়যন্ত্রে জড়িত একটি চক্র। সারা দেশের  পুলিশ মহলে এর নাম ভরতপুর গ্যাং। এরা বিভিন্ন চ্যাটিং এবং ডেটিং অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে লোকজনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলে। তারপর শুরু হয় হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা। এই ভাবেই হুমকি মেসেজের চাপে আত্মঘাতী হন পিন্টু। ‌ ব্লাকমেলে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায় ১৬ হাজার টাকা দিয়েছিলেন পিন্টু দে। তাঁকে কখনও সিবিআই অফিসার, কখনও কলকাতা পুলিশের কর্তাদের নাম করে হুমকি দেয়া হয়।

রাজস্থানের ভরতপুরে এই রকম ছোট ছোট দল রয়েছে। সেই দলের সদস্যরা বিভিন্ন চ্যাটিং অ্যাপে পুরুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতায়। কখনো পুরুষ সদস্যরা মহিলাদের নামে ফেক প্রোফাইল তৈরি করে আলাপ জমায়। পিন্টুর ঘটনায় আইয়ুবের ছেলে সেই কাজ করেছিল। ঘনিষ্ঠতা তৈরি  করে চক্রের সদস্যরা ভিডিও কল করে। এ প্রান্তের পুরুষ বন্ধু সেই কলে সাড়া দিলেই ও প্রান্ত থেকে বিভিন্ন মহিলার বিবস্ত্র ছবি দেখানো হয়। ‌সেই সময় প্রতারকেরা ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা পুরুষদের ছবি স্ক্রিনশট নিয়ে নেয়। সেই স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল করা। কখনো কখনো বড় পুলিশ অফিসারদের নামে ভুয়া পরিচয় পত্র তৈরি করেও ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। এই ভাবেই ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করে ভরতপুর গ্যাং।

গোয়েন্দারা পিন্টুর মোবাইল ঘেঁটে কিছু যাতে তথ্য পেয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয় আইয়ুব খানকে। তাকে ভরতপুর জেলা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার ট্রানজিট রিমান্ডে তাকে কলকাতায় আনা হয়। শনিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের আদালতে তোলা হয়। ধৃতকে ১০ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এখন এই গ্যাংয়ের  বাকি সদস্যদের খুঁজছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img