হোমরাজ্যBJP : দিলীপ-বিদায়ে শুভেন্দুর হাত? এবার কি বড় ভাঙনের পথে বিজেপি?

BJP : দিলীপ-বিদায়ে শুভেন্দুর হাত? এবার কি বড় ভাঙনের পথে বিজেপি?

BJP : দিলীপ-বিদায়ে শুভেন্দুর হাত? এবার কি বড় ভাঙনের পথে বিজেপি?

পুলক মিত্র : আচমকা দিলীপ ঘোষকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর গেরুয়া শিবিরে নানা হিসেব-নিকেশ শুরু হয়ে গিয়েছে। দিলীপবাবু পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সবচেয়ে সফল রাজ্য সভাপতি। কেন তাঁকে মেয়াদ ফুরনোর আগে এভাবে রাতারাতি সরিয়ে দেওয়া হল? এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা চলছে। পাশাপাশি উঠে আসছে আরও একটি প্রশ্ন। তা হল, দিলীপবাবুকে সরিয়ে বিজেপির আদৌ কোনও ফায়দা হবে কি? এই অপসারণ রাজ্যে বিজেপির সংগঠনকে কি আরও ব্যাকফুটে ঠেলে দেবে? শুভেন্দু অধিকারীকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কি বাংলায় দলকে আরও ক্ষতির মুখে ঠেলে দিলেন? এই প্রশ্ন নিয়েও পদ্মশিবিরের অন্দরে জোর আলোচনা চলছে।

একথা ঠিক, দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বেশ কয়েকজন নেতার সংঘাত বারেবারে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নেতারা হলেন, শুভেন্দু অধিকারী, স্বপন দাশগুপ্ত, তথাগত রায়, বাবুল সুপ্রিয়, মুকুল রায়, রাহুল সিনহা প্রমুখ। দিলীপের সঙ্গে এই নেতাদের বিরোধই রাজ্যে বিজেপির মধ্যে একধরনের অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। ভোটের পর মুকুল তৃণমূলে ফিরে গেছেন। এরপর জোড়াফুলে নাম লিখিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাই বিজেপি এমন একজন খোঁজ করছিলেন, যিনি সব শিবিরের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারেন।

বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২ বারের বেশি সভাপতি পদে থাকতে পারেন না। সেই হিসেবে আগামী নভেম্বরে দিলীপের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ মাত্র ২ মাস সময়। তারপরই স্বাভাবিক নিয়মে তাঁকে সরে যেতে হত। কিন্তু এই সময়টুকু কেন অপেক্ষা করতে পারলেন না অমিত শাহ-জে পি নাড্ডারা।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি করা হয়েছিল। মুকুলের ওই পদে এখন দায়িত্ব ভার সামলাবেন দিলীপ ঘোষ।

রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দিলীপ ও শুভেন্দুর মধ্যে যে বনিবনা হচ্ছে না, তা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরে এসেছে। বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর পর দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছেন শুভেন্দু। দলের একের পর এক সাংসদ, বিধায়ক যেভাবে তৃণমূলে চলে যাচ্ছেন, তা আটকাতে শুভেন্দুর ওপরই বেশি ভরসা করছেন শাহ-নাড্ডারা। তাই শুভেন্দুর সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে পারবেন, এমন নেতাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।”

নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার গৌড় বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানির অধ্যাপক। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আর এস এস) তাঁর দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। ২০১৯-এ তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন এবং বালুরঘাট থেকে বিজেপির সাংসদ নির্বাচিত হন। ‘লো প্রোফাইলে’ থাকা মৃদুভাষী সুকান্তবাবু কি দিলীপের যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে উঠতে পারবেন?

এ নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত হল, সভাপতি হিসেবে সুকান্তবাবু কতটা সফল হবেন, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে তিনি যে আরএসএসের মদত পুরোপুরি পাবেন, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। বারবার বেফাঁস মন্তব্য করে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন দিলীপ। সেদিক থেকে সুকান্তবাবু শব্দচয়ন বা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সংযত হবেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

সুকান্তকে যেমন আকস্মিকভাবে রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে, অনেকটা একইভাবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন দিলীপ। দীর্ঘকাল আরএসএসের সঙ্গে জড়িত থাকার পর ২০১৪তে সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন দিলীপ। তাঁকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। এরপর ২০১৫তে তিনি দলের রাজ্য সভাপতি হন। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে পরাস্ত করেন কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহন পালকে। আর ২০১৯-এর ভোটে লোকসভার সদস্য হন তিনি।

২০১৫-র ডিসেম্বরে দিলীপবাবু রাজ্য বিজেপির সভাপতি হয়েছিলেন। ২০১৮-র ডিসেম্বরে তাঁর প্রথম দফার কার্যকাল শেষ হয়ে গিয়েছিল। যদিও পরের বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২০২০-র জানুয়ারিতে ফের সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই হিসেবে ২০২৩-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁর কার্যকালের মেয়াদ ছিল। দলের একটি অংশের বক্তব্য, ২০১৮-র ডিসেম্বর থেকেই দ্বিতীয়বার সভাপতি কাজ শুরু করেছেন দিলীপবাবু। তাই এ বছরের নভেম্বরে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

দিলীপের অপসারণের কারণ হিসেবে দলের কেউ কেউ রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর সম্পর্কের অবনতির কথা উল্লেখ করছেন। অন্যদিকে আরএসএসের প্রচারক অমিতাভর সঙ্গে
সুকান্তর যথেষ্ট ভালো বোঝাপড়া রয়েছে।

রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব উত্তরবঙ্গকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই উত্তরবঙ্গের একজন সাংসদকে সভাপতি করা হয়েছে।

সাংসদ জন বার্লা সহ একাধিক নেতা পৃথক উত্তরবঙ্গ গড়ার দাবি তুলেছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদলের সময় উত্তরবঙ্গের দুজন সাংসদকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এর পিছনে বিশেষ অঙ্ক কাজ করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। রাজ্যে ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে উত্তরবঙ্গে রয়েছে ৮টি। আর ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে উত্তরবঙ্গে রয়েছে ৫৪টি। এবারের ভোটে উত্তরবঙ্গে ৩০টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতার বক্তব্য, সুকান্তবাবুকে রাজ্য সভাপতি পদে বসানো নিয়ে দলের মধ্যে বড় ধরনের অসন্তোষ না থাকলেও, শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তাতে রীতিমতো রুষ্ট দলের একটা বড় অংশ। এঁদের বেশিরভাগই দিলীপ ঘোষের অনুগামী। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার মতে, শুভেন্দু যেভাবে জামাই আদর পাচ্ছেন, তাতে আদি বিজেপি নেতারা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ইতিমধ্যে ৪ জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আগামী দিনে আরও অনেক বিধায়ক ঘাসফুলে ভিড়তে পারেন, এমনই জল্পনা তৈরি হয়েছে। দলের চাপে শুভেন্দুকে বিরোধী নেতা হিসেবে মেনে নিলেও, বিধায়কদের বড় অংশ বিদ্রোহের পথে হাঁটবেন না, এমন নিশ্চয়তা কিন্তু মিলছে না।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img