হোমসাহিত্য-সংস্কৃতিশতরূপে মানুষ : পর্ব ২৪।। হঠাৎ অনুভব করলাম, আমার পায়ের তলার মাটি...

শতরূপে মানুষ : পর্ব ২৪।। হঠাৎ অনুভব করলাম, আমার পায়ের তলার মাটি কাঁপছে

শতরূপে মানুষ : পর্ব ২৪।। হঠাৎ অনুভব করলাম, আমার পায়ের তলার মাটি কাঁপছে

ঘরের মেঝে ঝাড় দিচ্ছিল পূর্ণিমা। আজ দেরি করে এসেছে। ঘর পরিষ্কার করতে করতে বলল, ‘কাল খবর শোনোনি?
না। কাল ব্যস্ত ছিলাম লেখা নিয়ে। খবর শোনা হয়নি। কেন কি কয়েছে?
ডাইনিং টেবিল পরিস্কার করতে করতে বলল, ‘কাকে আর বিশ্বাস করবো?’
‘কেন কি হয়েছে?’
‘কি আর বলবো? যা দিনকাল পড়েছে!’
‘কি হয়েছে সেটা তো বলবে?’
একটা ন বছরের মেয়ে মামা বাড়ি এসেছে।
‘হ্যাঁ, কি হয়েছে?’
‘মামা জোর করে মেয়েটাকে…। মেয়েটা বাধা দিয়েছে। তাই খুন করে দিয়েছে। ভাবা যায়?’
‘খুন করে দিল?’
‘তাই তো বলছি।’
‘কোথায় ঘটেছে?’
‘বেলেঘাটায়।’
‘খবরে দেখলে তুমি?’
‘হ্যাঁ, খবরে দেখালো। কাকে বিশ্বাস করবে মানুষ?’
‘পুলিশ ধরেছে মামাকে?’
‘ধরবে না? ধর্ষণ করে খুন করে ছাদে ফেলে রেখেছিল। ভাবা যায়। কাকে বিশ্বাস করবে মানুষ?’

পূর্ণিমা বার বার কাকে বিশ্বাস করবে, কথাটা বলছে কেন? ও তো আমার বাড়িতে কাজ করছে পঁচিশ বছর হয়ে গেল। আগে ঘর পরিষ্কার বাসন মাঝা আর কাচার কাজ করতো। এখন রান্নার কাজ করে। ঝিনুক এখন কলকাতায় নেই। বদলি হয়ে চলে গেছে বহরমপুর। ওকে রান্নার দায়িত্ব দিয়ে গেছে। ও কি আমাকে কিছু ইঙ্গিত করতে চাইছে?
সবজি কাটতে বসেছে পূর্ণিমা। আমি লিখছি উপন্যাস। পূর্ণিমা আপন মনে বলে চলেছে, ‘বাচ্চা বুড়ি কাউকে এরা ছাড়ছে না। এরা কি মানুষ? কাকে বিশ্বাস করবে মানুষ?’

আবার সেই কথা। আমার প্রথমদিকে অস্বস্তি হচ্ছিল। এখন রাগ হলো। আমি ওর দিকে তাকালাম। করোনার কালে দু’মাস কাজে আসতে বারণ করেছিল ঝিনুক। মাইনে অবশ্য দিয়েছে ঝিনুক। তারপর কাজে লাগার সময় ওকে বলা হয়েছে, ‘তুমি বাথরুম ঢুকে প্রথমে স্যানিটাইজ করে নেবে নিজেকে। পোশাক পাল্টে কাজ করবে।’

এখন ঝিনুকের একটা নাইটি পড়ে কাজ করছে। পূর্ণিমা কালো। স্বাস্থ্য ভালো। মেদহীন শরীর। সুন্দর মুখশ্রী। তিনটে সন্তানের মা। বয়স চল্লিশ হবে। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে দেশের বাড়িতে। অভাবে এখানে বাড়ি বাড়ি কাজ নিয়েছে। কিন্তু কোনওদিন ওর ওপর আমার এই রকম মানসিকতা জাগেনি। তবু কেন বার বার এই কথা বলছে?

রান্না করছে। বলল, এখন ঘরে মেয়ে বউ থাকলে চিন্তা। কে কখন কী সর্বনাশ করে দেয়। কাকে বিশ্বাস করবে মানুষ?


আবার সেই কথা। এবার আমি লেখা থামিয়ে বললাম, তুমি বার বার এক কথা বলছো কেন?
তোমার যদি ভয় হয় কাল থেকে কাজে এসো না।
ওমা আমি কি সেকথা বললাম নাকি?
সে তুমি বোঝো।
কি আশ্চর্য! সত্যি পরের দিন থেকে পূর্ণিমা আর কাজে আসছে না।
ঝিনুককে সেকথা জানালাম। সে বলল, ঐ ঘটনার জন্য ও কাজ ছেড়ে দেবে কেন? এতো বছর কাজ করছে। হঠাৎ কাজ ছেড়ে দিল।
তাই তো দেখছি।
তুমি কিছু করোনি তো?
ঝিনুকের গলায় পূর্নিমার কন্ঠস্বর। আমি কি বলবো? হঠাৎ অনুভব করলাম, আমার পায়ের তলার মাটি কাঁপছে।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img