দেবস্মিতা নাগ
কে সি দাস। ভোজনরসিক বাঙালির কাছে এক অতি পরিচিত নাম। সম্পর্কে তিনি হলেন রসগোল্লার বড় ভাই। হ্যাঁ, সেই রসগোল্লা যাঁর জনক হলেন নবীন চন্দ্র দাস। সুতরাং সেই নবীন দাসের পুত্র কে সি দাসকে রসগোল্লার বড় ভাই বলতেই বা বাধা কোথায়!
১৯৩৫ সাল নাগাদ কে সি দাস ও তাঁর পুত্র সারদাচরণ দাস দুজনে মিলে ধর্মতলায় এক বিরাট মিষ্টির দোকান খুলেছিলেন, যার অন্যতম আকর্ষণীয় খাদ্য ছিল রসমালাই। খাদ্যরসিক বাঙালি কে সি দাসকেই রসমালাইয়ের জনক বলে চিহ্নিত করেছেন।
তবে ইনট্যাকের “হেরিটেজ” সম্মান পাওয়া এই দোকান নবীন দাসের রসগোল্লার সনাতনী স্বাদ ও আঙ্গিক একইভাবে ধরে রেখেছে। নতুন নতুন নামেও জিভে জল আনা স্বাদে এখানে রসগোল্লাকে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন-স্ট্রবেরি রসগোল্লা, স্পঞ্জ রসগোল্লা ইত্যাদি। এখানে যেমন সাবেকি নলেন গুড়ের সন্দেশ পাওয়া যায়, তেমনই মেলে নলেন গুড়ের রোল।
প্রথম সারির হেভিওয়েট মিষ্টিদের মধ্যে ল্যাংচার নামটা করতেই হয়। শীতকালে কিছু মরসুমি মিষ্টির দেখা মেলে। যেমন-গুড়ের রায়টাকলি, গুড়ের শঙ্খ, গুড়ের তালশাঁস। বিরল মিষ্টির মধ্যে অমৃতকুম্ভ এখানকার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
১৪ই নভেম্বর এই দোকানে ধুমধাম করে রসগোল্লা দিবস পালিত হয়। কারণ এই দিনেই ভারত সরকার রসগোল্লাকে বাঙালি মিষ্টি প্রস্তুতকারক নবীনচন্দ্র দাসের আবিষ্কার বলে স্বীকৃতি দেন। পশ্চিমবঙ্গ রসগোল্লার জি আই বা পেটেন্ট পায় এই দিনে।
১৯৩০ সালেই প্রথম কৌটোয় বন্দি রসগোল্লা হাওয়াই জাহাজ চড়ে বিদেশ পাড়ি দেয় এই কে সি দাসের হাত ধরেই। কারণ মাটির ভাঁড়ে মিষ্টি গেলে, তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। শুধু “প্যাকেজিং”য়ে নয়, মিষ্টি প্রস্তুতিতে ও পরিবেশনায় পরিচ্ছন্নতা বা “হাইজিন”-এর দিকে প্রথম নজর দেন কে সি দাস। তাঁর দোকানেই প্রথম ময়রাদের হাতে গ্লাভস, মিষ্টি তোলার চিমটে দেখা যায়। আধুনিক যন্ত্রপাতিও নিয়ে আসেন তিনি।
“ব্র্যান্ডিং”-এর ধারণাও মিষ্টির বাজারে কে সি দাসই প্রথম আনেন, আর সেই কারণেই কে সি দাসের অমৃত কলস, কেসি দাসের ছানার পায়েশ, এগুলো শুধু মিষ্টিই নয়, জগৎজোড়া নামও বটে। কে সি দাস বাংলার খাদ্য সম্ভারে যেন একটি অলঙ্কারের নাম।