হোমরাজ্যমেডিক্যালে ইঞ্জেকশনকাণ্ডে দোষী চিকিৎসক, নির্মলের ডানা ছাঁটতে চলেছেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

মেডিক্যালে ইঞ্জেকশনকাণ্ডে দোষী চিকিৎসক, নির্মলের ডানা ছাঁটতে চলেছেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

মেডিক্যালে ইঞ্জেকশনকাণ্ডে দোষী চিকিৎসক, নির্মলের ডানা ছাঁটতে চলেছেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে টসিলিজুমাব ইঞ্জেকশন-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন চিকিৎসক দেবাংশী সাহা, যিনি তৃণমূল বিধায়ক-চিকিৎসক নির্মল মাজির (Nirmal Majhi) অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এই কেলেঙ্কারির জেরে এবার সব পদ খোয়াতে চলেছেন নির্মল। এর আগেও কুকুরের ডায়ালিসিসের সুপারিশ সহ একাধিক বিতর্কে জড়িয়েও পার পেয়ে গিয়েছেন এই চিকিৎসক নেতা। কিন্তু এবার নির্মলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শনিবার তৃণমূলের সাংগঠনিক বৈঠকেও কড়া বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Chief Minister Mamata Banerjee) বলেছিলেন, দলের কেউ দুর্নীতিতে জড়ালে তিনি রেয়াত করবেন না। সূত্রে খবর, নির্মলের কাজে মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।

উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বর্তমানে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি। সেইসঙ্গে চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি পদে রয়েছেন তিনি। নির্মলবাবু একসময় মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি ওই পদ থেকে ইস্তফা দেন। স্বাস্থ্যভবন ওই ইস্তফা পত্র চেয়ে পাঠিয়েছে। নির্মলের দাবি, তিনি এর সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত নন। দালালচক্রের কথা তিনিই জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (Kolkata Medical College) টসিলিজুমাব ইঞ্জেকশন-কাণ্ডে (Tocilizumab Injection) ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যভবনে জোড়া তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে। দুটি রিপোর্টেই মেডিক্যালের চিকিৎসক দেবাংশী সাহাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেবাংশী নিয়ম ভেঙে ওই ইঞ্জেকশন নিয়েছিলেন। এই রিপোর্ট নবান্নে (Nabanna) মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা পড়বে। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনও মেডিক্যাল অফিসার বা হাউস স্টাফ সই করলেই টসিলিজুমাব ইঞ্জেকশন দেওয়া যায় না। একমাত্র সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার (Medical Officer) বা আরএমও-র (RMO) স্বাক্ষর থাকলেই এই ইঞ্জেকশন নেওয়া যেতে পারে। কোন রোগীর জন্য ইঞ্জেকশন নেওয়া হচ্ছে, ফর্মে তা-ও লিখতে হবে।
কিন্তু এক্ষেত্রে কোনও নিয়মই মানা হয়নি।

অভিযোগের গুরুত্ব বিচার করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একটি ৭ জনের, অন্যটি ৩ জনের।

অভিযুক্ত চিকিৎসক দেবাংশীর সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি। তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ, নির্মল মাজির ঘনিষ্ঠ এই চিকিৎসক প্রভাব খাটিয়ে কর্তব্যরত এক নার্সের কাছ থেকে ওই ইঞ্জেকশন তিনি হাতিয়ে নিয়েছিলেন।

গত বুধবার মেডিক্যাল কলেজ থেকে গায়েব হয়ে যায় করোনা চিকিৎসার জীবনদায়ী ওষুধ ২৬টি টসিলিজুমাব ইঞ্জেকশন। এগুলির বাজার মূল্য প্রায় ১১ লক্ষ টাকা। একটির দাম ৪২ হাজার টাকার মতো। একসময় এই ইঞ্জেকশন কালোবাজারে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা দামেও বিক্রি হয়েছে।

প্রশ্ন হল, একসঙ্গে ২৬টি ইঞ্জেকশন তিনি কেন নিয়েছিলেন? ইঞ্জেকশনগুলি গেল কোথায়?

গত ৩ মে স্বাস্থ্য দফতর রেমডেসেভির (Remdesivir) এবং টসিলিজুমাব, এই দু’টি ইঞ্জেকশনের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছিল। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, প্রস্তুতকারক সংস্থা এই দুটি ইঞ্জেকশন শুধুমাত্র নার্সিংহোম ও কোভিড হাসপাতালকেই বিক্রি করতে পারবে।

এর আগেও একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন নির্মল। এসএসকেএমে কুকুরের ডায়ালিসিসের আবদার করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

এরপর তাঁর ডাক্তারি-পড়ুয়া ছেলের পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের সিসিটিভি-ক্যামেরা বন্ধ রাখা এবং ছেলে যাতে নিজের পছন্দ মতো জায়গায় বসে পরীক্ষা দিতে পারেন, তা নিয়ে চাপ তৈরি করেছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই শেষ পর্যন্ত নির্মলকে পিছু হটতে হয়।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img