তীর্থঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
লন্ডন প্রবাসী প্রাক্তন বিশিষ্ট সাংবাদিক তীর্থঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বিলেতের এক টুকরো অসাধারণ ছবি আঁকলেন শুধুমাত্র এই পোর্টালের জন্য। এদিকে সবে শুরু শীতকাল। ওদিকের হিমেল হাওয়া বয়ে আনল তাঁর কলম।
আজ সারাদিন ঝিরঝির করে বৃষ্টি। গত কয়েকদিনের কনকনে হওয়াটা নেই। কিন্তু সূর্যের আলোর সাময়িক ঝিলিক স্যাঁতস্যাঁতে শীতের অস্বস্তিকে কাবু করতে পারেনি।
আজ সারাদিন গাড়ি চালায়নি। যেখানেই গিয়েছি, হেঁটে গিয়েছি। তাতে যতটা গা গরম হয়েছে, তা বাইরের ঠান্ডা উপেক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয়। না হাঁটার অভ্যেস ক্লান্তির আস্তরণ হয়ে ঢলে পড়েছে শরীর এবং মনে।
দিবানিদ্রায় আমার ঘোর অস্বস্তি। ঘুম থেকে উঠলেই অম্বল গলা-বুক সব জাপটে ধরে। সঙ্গে মাথাধরা। শীতের বিকেলে তো আরও জমাট হয়ে চেপে বসে। তাও আজ ঘুমিয়েছি দুপুরে।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে টেলিভিশন চালানোই দস্তুর। আজ সারাদিন বিশ্বের নানা প্রান্তে কী ঘটেছে, তার কোনো হদিশ পাইনি। নেওয়ার সুযোগ বা ইচ্ছে কোনোটাই হয়নি। এমনিতে মোবাইলেই দেখি। আজ কেন জানি না টেলিভিশনটা চালালাম।
আমাদের বাড়িতে আমি ছাড়া দুটো টেলিভিশনের একটাও কেউ চালায় না। গণেশের দুনিয়া যেমন শিব-পার্বতীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, আজকের দুনিয়ায় বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে তা মোবাইল-কেন্দ্রিক। আমার বাড়ির কাছে মোবাইলের একটা দোকানের নামও Small World।
টেলিভিশন চালাতেই দেখি লন্ডনের অভিজাত কেনসিংটন এলাকায় গুলি চলেছে। ব্যাঙ্ক এবং জুয়া খেলার এক দোকানে রাহাজানি করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক সশস্ত্র ব্যক্তি।
প্যারিসে যেমন শঁজেলিঁজে (Avenue des Champs-Élysées) বা নিউইয়র্ক-এর ম্যানহাটনের Upper East Side, লন্ডনে তেমনি কেনসিংটন। ইতিহাস, আভিজাত্য আর বাণিজ্যের এক সুষম মিশেল।
নিহতের নাম এখনও জানানো হয়নি। টেলিভিশনের পর্দায় ঘটনার ছবি আর বিবরণ শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, যিনি রাহাজানি করতে গিয়েছিলেন তার ভাবনার কথা। তিনি কি ভেবেছিলেন, পার পেয়ে যাবেন? কেন এই চরম ঝুঁকি নিলেন?
ঝুঁকি এক অদ্ভুত ব্যাপার। কোনও বিপজ্জনক ঘটনার মূল্য হলো ঝুঁকি। সেই অর্থে দুর্নীতি বা অসামাজিক কাজের মূল্যও ঝুঁকি। এই ক্ষেত্রে ঝুঁকি হল, শাস্তির সম্ভাবনা। দুর্নীতি করে লাভ এবং ঝুঁকির কারণে ক্ষতি। এই দুয়ের পারস্পরিক তুলনাই দুর্নীতি বা কোনো অসামাজিক কাজ করার যৌক্তিকতার নির্ণায়ক। নিহত লোকটি কি মাঠে নামার আগে শেষ পর্যন্ত লাভ-ক্ষতির হিসেব কষেছিলেন?