হোমরাজ্যপালা বদলের পালা, যাত্রা হলো শুরু

পালা বদলের পালা, যাত্রা হলো শুরু

পালা বদলের পালা, যাত্রা হলো শুরু

শ্যামল সান্যাল : তিথি পঞ্জিকা অনুসারে বুধবার ছিল নবমী। সকাল ১১টা ১১ মিনিটে তিনি তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতার শীর্ষ পদে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নবান্নের ১৪ তলায় গঙ্গামুখী তিন মাস শূন্য থাকা ওই কুর্সিতে বসে সব নজির ভেঙে দিলেন।

মমতা ব্যানার্জি নামে এক বিরল রাজনৈতিক চরিত্র আজ এই মুহূর্তে রাজ্যের টালমাটাল পরিস্থিতিতে নৌকার কান্ডারি। তাঁর ওই শান্তিনিকেতনী উলিধুলি ঝোলাতেই বাংলার ১০ কোটি মানুষের বাঁচার বিশল্যকরণী আছে। তাঁর হাতেই এই রাজ্যের মনুষ্যসমাজকে জীবিত করার জিয়ন কাঠি। এই জিয়ন কাঠি বুলিয়ে তিনি এই বঙ্গকে আবার “সোনার বাংলা”, জীবনানন্দের “রূপসী বাংলা” করে সাজিয়ে দেবেন এই স্বপ্নে মশগুল সব মানুষ। গোটা দেশ গভীর আগ্রহে চেয়ে আছে এই “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা” বঙ্গ ভূমির দিকে।

রাজনৈতিক মহলের বিশ্বাস, এবারে মমতা ব্যানার্জি একবারে নতুন ভূমিকা নেবেন। তিনি নতুন ভঙ্গিতে রাজ্য প্রশাশনের হাল ধরবেন, নৌকায় উড়বে নতুন পাল। গানের সুরে “পাল তুলে দে” শোনা যাবে। উত্তাল নদী, আকাশে বজ্রগর্ভ মেঘ, চমকাচ্ছে বিদ্যুৎ – ঘন ঘোর আঁধারে ডুবে গোটা দেশ চাইছে , এই কান্ডারী পার করে দিন এই ঘোর দুঃসময়। শান্ত সুন্দর ভোর হবে। হবে মানুষের জয়।

তাঁরা একই সঙ্গে বলছেন, কিন্তু হুঁশিয়ার থেকো। অজস্র বিপদ, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত হবে। বন্ধু সেজে শত্রুদের দল নৌকা ছেঁদা করে ডুবিয়ে দেবার চেষ্টা করবে মাঝ দরিয়ায়।

করোনার সঙ্গে প্রবল যুদ্ধ তিনি জিততে পারবেন কি না, সেই অগ্নিপরীক্ষায় “অগ্নিকন্যা” বসবেন এক্ষুনি। দুর্গার মত দশ হাতে যুদ্ধে তিনি অসুর বধ কীভাবে করেন, তা দেখতে নজর রেখেছে নিউইয়র্ক, লন্ডন, বেজিং, মস্কো, ঢাকা এবং এই মহা-ভারত।

রাজনৈতিক মহলের খবর, মমতা বুধবার থেকেই করোনা ও প্রশাসন কঠোর হাতে মোকাবিলা করবেন। নিজেই স্বরাষ্ট্র দপ্তর হাতে রেখে আমলা ও পুলিশে ব্যাপক রদবদল করবেনই। বেশ কিছু মাথা কাটা যেমন যাবে, তেমনই পুরস্কার জুটবে অনেকের।

মন্ত্রিসভায় সব থেকে বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ সুব্রত মুখার্জির হাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব তিনি দেন কিনা, সেটা অনেকের আলোচনার বিষয় এখন। সুব্রতবাবু এ দেশের একমাত্র রাজনৈতিক নেতা, যিনি সংসদীয় রাজনীতিতে ৫০ বছর পূর্ণ করলেন এই বারের নির্বাচনে রেকর্ড ভোটে জিতে। তাঁকে প্রোটেম স্পিকারের দায়িত্ব দিয়ে মমতা একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। অন্যদিকে এই মন্ত্রিসভায় কিছু মুখ বাদ যাবার সঙ্গে সঙ্গে ঝক ঝকে তর তাজা মুখের দেখা যেতে পারে। মহিলা মন্ত্ৰীর সংখ্যা বাড়তে চলেছে বলেই নির্ভর যোগ্য সূত্র জানাচ্ছে।

এই নির্বাচনে গোটা দেশের ফলাফলের বিশ্লেষণে সরল সত্য হল : বি জে পির তখত নড়বড়ে হয়ে গেছে। করোনা ও আর্থিক পরিস্থিতি সামলাতে মোদী সরকার ডাহা ফেল করেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ভারতের দশা করুণ। পড়শি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, নেপালও ক্ষুব্ধ। আমেরিকা, রাশিয়া, চিন কারো সঙ্গেই আজ ভারতের সম্পর্ক ভালো নয়। আর এস এস এবং বিজেপি নেতৃত্বের একটা বড় অংশের ক্ষোভ চাপা থাকছে না। বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে এই বিষয়ে বহু খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এই দেশের কিছু সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়াতেও নানারকম খবরাখবর বেরোচ্ছে।

এই অবস্থায় দেশের পালা বদলের চেষ্টাও শুরু হয়েছে। বিজেপি বিরোধী সব রাজনৈতিক দল একটা ছাতার নীচে আসার কথাবার্তা চলছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই জোটের মুখ হতে চলেছেন মমতাই। কারণ, জাতীয় স্তরে তিনিই একমাত্র সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মুখ। তাঁকে কান্ডারী করতে কোনও মতবিরোধের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এখনই অবশ্য মমতা ব্যানার্জি ঘর সামলাবেন ও সাজাবেন নিজের মত করে ।
তারপর ? সময়ই সব বলবে। “তিষ্ঠ ক্ষণকাল”, বলছেন বিজ্ঞজনেরা।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img