দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্র সরোবর কি ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে? বর্তমানে এই সরোবরের যা অবস্থা, তাতে অত্যন্ত শঙ্কিত পরিবেশবিদরা। লেকের জল ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। জলের স্তর এখন এতটাই নেমে গিয়েছে যে, লেকের একাংশে চড়া পড়ে গিয়েছে। সেখানে ঘাস গজাচ্ছে। জলাশয়ের একাংশ কার্যত ফুটবল মাঠের চেহারা নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত ২৫ বছরে এখানকার জলস্তর কখনও এতটা নীচে নামেনি।
যেভাবে দিন দিন জল কমে আসছে, তাতে দ্রুত ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। তা না হলে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা পরিবেশবিদদের। এখানকার প্রাতঃভ্রমণকারীদের দাবি, সরোবরের কী পরিস্থিতি, তা সরেজমিনে এসে দেখে যান পরিবেশ মন্ত্রী মানস ভুঁইঞা।
প্রায় ১৯০ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রবীন্দ্র সরোবর। এর মধ্যে জলাশয় রয়েছে ৯০ একর। কলকাতার আর কোথাও এ ধরনের জলাভূমি নেই।
বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষের মতে, এই লেক শুকিয়ে গেলে, দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে তার প্রভাব পড়বে। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশের ধুলোবালি এই লেকের জলই টেনে নেয়। অর্থাৎ দক্ষিণে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে এই লেকের বড় ভূমিকা রয়েছে।
রবীন্দ্র সরোবর জাতীয় সরোবরের মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে এটি নিয়ন্ত্রণ এখন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। তবে এই সরোবরের দেখাশোনা করার দায়িত্ব কেএমডিএ-র। তাই নজরদারির ক্ষেত্রে কেএমডিএ-র বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে।
সৌমেন্দ্রমোহনবাবুর কথায়, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সবুজ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে জল। এর ব্যতিক্রম নয় রবীন্দ্র সরোবরও। তাই নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজন। কিন্তু নজরদারিতে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
রবীন্দ্র সরোবরে যাঁরা নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ করেন, তাঁদের অন্যতম হলেন সৌমেন্দ্রমোহনবাবু। তিনি জানান, সরোবরের পরিবেশ রক্ষায় তাঁরা বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামীকাল প্রাতঃভ্রমণকারীদের পক্ষ থেকে এই সরোবরে পেয়ারা সহ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রাঙামাটি প্রকল্পে লেক গার্ডেন উড়ালপুলের নীচে তাঁরা বেশ কিছু ঔষধি গাছও লাগিয়েছেন বলে জানান সৌমেন্দ্রমোহন।
এই সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ অর্থ কেন্দ্র এবং বাকি ৪০ শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকার দিয়ে থাকে।