হোমPlot1পর্ব ২: রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর ভালোবাসার  শতবার্ষিকী

পর্ব ২: রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর ভালোবাসার  শতবার্ষিকী

পর্ব ২: রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর ভালোবাসার  শতবার্ষিকী

বিকাশ পাল , লন্ডন
রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্রেমের সম্পর্ক কেমন ছিল তা নিয়ে অনেক গবেষণা, অনেক  আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তার অধিকাংশই আমার জানা হয়নি। আমি  রবীন্দ্রগবেষক বা  সমালোচক – এই দুয়ের কোনোটাই নই। আমি তাঁকে ভালোবাসি, ব্যাস, এইটুকুই  আমার পরিচয়। তবে এই প্রেমের সম্পর্ক যে দর্শন স্পর্শনের অনেক ওপরে, তা পরবর্তীকালে তাঁদের চিঠিপত্র, বিজয়াকে নিয়ে  কবির কবিতা,  আর বিজয়ার  উৎসাহে আর ব্যবস্থাপনায়  কবির  কবিতা  পাঠ ও ছবির প্রদর্শনী  থেকে  সহজেই ধারণা করা যায়।

লিমায় যাওয়ার দিনক্ষণ ফের স্থির করার আগে আবার কবির ডাক্তারি পরীক্ষা হল। ডাক্তারবাবুরা বললেন,  আরও  বিশ্রাম দরকার।  মিরাল রিও ৮-১০ দিনের জন্য  ভিক্টোরিয়া নিয়েছিলেন । বাড়ির মালিকের স্ত্রী যেহেতু  ভিক্টোরিয়ার বান্ধবী তাই  সৌজন্যের খাতিরে মালিক কোনও টাকাকড়ি নেননি। কিন্তু এভাবে বেশি দিন চলে না। কবির নিজস্ব সম্বলও নেই।  নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি বিশ্বের সব দেশেই গিয়েছেন অতিথি হিসেবে।  অমনি তাড়াহুড়ো করে ভিক্টোরিয়া, বিয়েতে  তাঁর বাবা মায়ের থেকে পাওয়া মাথার টিয়ারাটি একেবারে জলের দামে বেচে বাড়ি ভাড়ার টাকার ব্যবস্থা করে ফেললেন।  গুরুদেব মিরাল রিও-তেই আরও এক মাসের বেশি থেকে গেলেন।

ভিক্টোরিয়া কবির সাথে নিয়মিত দেখা করতেন এই বাড়িতে। কবিও  ভিক্টোরিয়ার বাড়িতে যেতেন। সেখানে বাগানে বসে অনেক সাহিত্যানুরাগীর সাথে কথা বলেছেন, ছবি তুলেছেন। সেই বাড়িটি মিরাল রিও থেকে হাঁটা পথে – নাম ভিলা ওকাম্পো। মাঝে কয়েকদিন প্রায় ২৫০ মাইল দূরে চাপাদমালাল সমুদ্র সৈকতের বাংলোতে বেড়িয়ে এসেছেন।

আমার পক্ষে সব জায়গাগুলি ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে এবছর ডিসেম্বর মাসে তিন সপ্তাহের জন্য আমি দক্ষিণ আমেরিকার ছয়টি দেশে আমার বিষয়ের ওপর বক্তৃতার  সুযোগ পাই। সৌজন্যে  IEEE Power and Energy Society Distinguished Lecture Program। তিন দিন  বুয়েনস আয়ারস-এ  ছিলাম। সেখানে আমার দেখাশুনার দায়িত্বে ছিলেন মেলিনা গঞ্জালেজ আর আলবার্তো এসকোবার। এঁরা দুজনেই আমার মতো পেশায়  ইঞ্জিনিয়ার। দুজনেই বেশ বুদ্ধিমান  মার্জিত রুচির মানুষ। মেলিনা আমায় একদিন ভিলা ওকাম্পো ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। এটি এখন  ইউনেস্কোর অধিগৃহীত এক মিউজিয়াম। সেই সংলগ্ন  বাগানে ছবিও তুলেছি। তবে মিরাল
রিও-র বাগান, পিপা গাছ, যার তলায় কবি বসে আকাশ,  আলো  আর লা দে প্লাতা নদীর সৌন্দর্যের সাথে একাত্ম হতেন, সে সব দেখা হয় নি। 

সে যাত্রায় কবির আর পেরু-মেক্সিকো যাওয়া হোল না ।  আর্জেন্টিনা সরকারের মধ্যস্থতায় পেরুর দূতাবাসে কবির অসুস্থতার বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়। কবি পেরু ও মেক্সিকোর উদ্যোক্তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন,  না যেতে পারার জন্য।

জানুয়ারি মাসের ২ তারিখ এ বুয়েনস আয়ারস বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন। পরের দিন  জুলিও চেজারে জাহাজে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন।  সপ্তাহ দুয়েক পরে ইটালির জেনোয়ায় পৌঁছে বিজয়াকে  চিঠি লেখেন। তবে তার আগে জাহাজেই  টেলিগ্রামের আদান প্রদান হয়েছে।  গুরুদেব বিজয়ার চোখের সামনে নেই , কিন্তু তাঁর সারা হৃদয় জুড়ে রয়েছেন – গুরুদেব আর্জেন্টিনা ছাড়ার দু দিন পর  বিজয়ার লেখা একটি চিঠির কয়েক লাইন এখানে উদ্ধৃত  করলাম – এর থেকে বোঝা যায় বিজয়া গুরদেবকে কি চোখে দেখেছিলেন।

Dear Gurudev
I went to your house (Miral Rio) yesterday. It was not a very wise thing to do, I acknowledge. The twilight was creeping over the staircase, and I knew it was waiting for me in your uninhabited room. An awful sense of loneliness has been haunting me, since I left you and the Giulio Cesare.
I kiss your hand Gurudev .
Vijaya

গত বছর ইন্দোনেশিয়ার যোগজাকার্তা গিয়েছিলাম, বালি বরবুদুর  ঘুরে এলাম। আমার  প্রাক্তন ছাত্র  অধ্যাপক হুসনি আলি চমৎকার  ব্যবস্থা করেছিল। সে বিমান বন্দরে বিদায় জানানোর সময় আমায় বলল – Prof,  May I  kiss your hand ?    কাউকে বাবার মত ভালবাসলে এরা সেটা করে, হুসনি বলল । হুসনির এই ব্যবহারে আমি অভিভূত হয়েছিলাম সেদিন। যাই হোক গুরুদেবের প্রসঙ্গে ফিরে আসি।

আন্দ্রেজ জাহাজ, মিরাল রিও, চাপাদ মালাল জুলিও চেজারে  জাহাজে কবি অনেক কবিতা লেখেন। এসব কবিতা আর কিছু আগের লেখা কবিতা  – সব কিছু একত্র করে পরে পূরবী কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালের শেষের দিকে। পূরবীর উৎসর্গের পাতায় লেখা –   বিজয়ার করকমলে

তবে পূরবীর  যে কয়েকটি কবিতা কবি মিরাল রিও তে থাকার সময়  লিখেছিলেন তার অন্তত চারটির কথা না বললে এ বিষয়ে প্রতিবেদন  আমার হিসেবে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।  এগুলি হল – অতিথি, আশঙ্কা , শেষ বসন্ত, আর বিপাশা । এগুলি ১৫-২২  নভেম্বরের মধ্যে লেখা। ঠিক ওই প্রথমের দুটি  চিঠির সময় সময়ই । তখন কবির চেতনালোক  প্লাবিত ছিল ভিক্টোরিয়ার ভালোবাসার উষ্ণতায় আর মুগ্ধতায়। তবে  সে প্লাবন কবির জীবনের বাস্তবতা আর সীমাবদ্ধতা বোধের সমোয়চিত উপলব্ধিকে লুপ্ত করেনি। তাই তিনি লিখেছিলেন নীচের লাইনগুলি

-অতিথি,

তেমনি তারার মতো মুখে মোরে চাহিলে, কল্যাণী-
কহিলে তেমনি স্বরে, তোমারে যে জানি, আমি জানি ।
জানি না তো ভাষা তব, হে নারি, শুনেছি তব গীতি –
প্রেমের অতিথি কবি, চিরদিন আলোর অতিথি।

মিরাল রিও, ১৫ নভেম্বর

আশঙ্কা

ভালবাসার মুল্য আমায় দু হাত ভরে
যতই দেবে বেশি করে,
ততই আমার অন্তরের এই গভীর ফাঁকি
আপনি ধরা পড়বে না কি।
তার চেয়ে ঋণের রাশি রিক্ত করি
                                          যাই না নিয়ে শূন্য তরী
বরং রব ক্ষুধায় কাতর ভালো সেও,
সুধায় ভরা হৃদয় তোমার

ফিরিয়ে নিয়ে চলে যেয়ো।

পাছে আমার আপন ব্যথা মিটাইতে
ব্যথা জাগাই তোমার চিতে ,
পাছে আমার আপন বোঝা লাঘব তরে
চাপাই বোঝা তোমার পরে।

সেই ভয়েতেই মনের কথা কই নে খুলে
ভুলতে যদি পারো তবে

সেই ভালো গো , যেও ভুলে ।

তাই তো আমি বলি তোমায় নতশিরে-
তোমার দেখার স্মৃতি নিয়ে
একলা আমি যাব ফিরে।
মিরাল রিও , ১৭ ই নভেম্বর

শেষ  বসন্ত

তোমার কানন তলে ফাল্গুন আসিবে বারংবার

তাহারি একটি মাগি আমি দুয়ারে তোমার।

রাত্রি যবে হবে অন্ধকার
বাতায়নে বসিয়ো তোমার।
সব ছেড়ে যাব প্রিয়ে,
সমুখের পথ দিয়ে,
ফিরে দেখা হবে না তো আর।
ফেলে দিয়ো ভোরে গাঁথা ম্লান মল্লিকার মালাখানি
সেই হবে স্পর্শ তব
সেই হবে বিদায়ের বাণী

মিরাল রিও, ২১ নভেম্বর

কবি বিজয়ার জন্য অতিথি  এবং আশঙ্কা ইংরেজিতে নতুন করে সংক্ষেপে লিখেছিলেন । শেষ বসন্তের মর্মার্থ ইংরেজিতেই বলেছিলেন সেই সময় । নতুন করে লেখেন নি । পরে ভিক্টোরিয়ার  অনুরোধে কবির জন্ম শতবর্ষের প্রাক্কালে শান্তিনিকেতন থেকে সতীশ  রায়  এটি অনুবাদ করে পাঠান ১৯৬০ সালে।

গুরুদেব,  ওই কয়েক সপ্তাহে  মিরাল রিও তে যে কয়েকটি বাংলা শব্দ বিজয়াকে শিখিয়ে ছিলেন, তার মধ্য থেকে বিজয়া একটি মাত্র শব্দ  আজীবন মনে রাখতে পেরেছিলেন এবং পরে চিঠিতে লিখতেন । সেই শব্দটি হোল ভালোবাসা ।

মিরাল রিওতেই কবির ছবি আঁকার  অভ্যাস শুরু  হয়। সাধারণত কবিতার লাইনে শব্দ মনের মত না হলে, সেগুলো কাটাকুটি করতেন। আর তা এমন ভাবে করতেন যে সেসব রেখা চিত্রে কখনো নারী , কখনো চেয়ার , কখনো নারী পুরুষের  ঘনিষ্ঠভাবে বসার ছবি হয়ে উঠত। এসবের সুন্দর প্রেক্ষিত ছিল।  নিয়মিত বিজয়া কবির কাছে বিখ্যাত ফরাসি কবি বঁদেলিয়ারের কবিতা পড়ে শোনাতেন। কবিতার পটভূমিতে অনেক নামি দামি আসবাব পত্র থাকত। এসব গুরুদেবের পছন্দের নয়। তাই বঁদেলিয়ারকে তিনি বলতেন,  ফার্নিচার পোয়েট। পরে  ভিক্টোরিয়া  উপহার হিসেবে গুরদেবকে যে চেয়ার জাহাজে আরাম করে আসার জন্য দিয়েছিলেন সেই চেয়ারে বসে জীবনের শেষ বয়স পর্যন্ত কবি অনেক কবিতা লিখেছেন।  

চেয়ারটি যে সত্যি আরামের তা গুরুদেব বিজয়াকে বলতেন। তখন ভিক্টোরিয়া  গুরুদেবের বঁদেলিয়ারকে  নিয়ে মন্ত্যবের কথা মনে করিয়ে রসিকতা  করতেন  চিঠিতে। গুরুদেব কিছুটা বিব্রতবোধ করলেও সেই রসিকতা উপভোগ  করতেন। পরে বেশ কিছু  ছবি এঁকে কবি সেগুলি ইউরোপে প্রদর্শনীর ইচ্ছা প্রকাশ করেন বিজয়ার কাছে। প্যারিস, লন্ডন, বারমিংহাম শহরে ১৯৩০ সালে প্রদর্শনী হয় এবং সফলও হয়। প্যারিসের প্রদর্শনীর সব আয়োজন  ও খরচের দায়-দায়িত্ব ভিক্টোরিয়া  সম্পূর্ণ নিজের হাতে তুলে নেন। চিত্রকর রবীন্দ্রনাথকে আমরা  যারা ভালোবাসি – সেই রবীন্দ্রনাথকে ৬৩ বছর বয়সে ভিক্টোরিয়া ছবি আঁকার প্রেরণা দিয়েছেন। এজন্য রবীন্দ্র অনুরাগীদের ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর কাছে অপরিশোধনীয় ঋন থাকবে। প্যারিসে প্রদর্শনীর সময় বিজয়ার সাথে গুরুদেবের দ্বিতীয় বার দেখা হয় , আর সে দেখাই শেষ দেখা।

চিত্র প্রদর্শনীর পর কবি অক্সফোর্ড বিশ্ব বিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হন   হিবার্ট লেকচার দেওয়ার জন্য , গুরুদেবের অনুরোধ স্বত্বেও বিজয়া তাঁর সফর সঙ্গিনী হতে পারেন নি । তিনি নিউ ইয়র্ক চলে যান তাঁর ম্যাগাজিন সুর প্রতিষ্ঠার কাজে ।  কবি কিছদিন ইটালি সুইজারল্যান্ড এ সময় কাটান  সাহিত্যিক আর দার্শনিক  রোমা রোঁলার ব্যবস্থাপনায় ।

এর পর অনেক বার কবি লিখলেও বিজয়ার পক্ষে শান্তিনিকেতনে  আসা সম্ভব হয় নি।  একবার ১৯৩৯ সালে আসার ব্যাপারে ঠিক হয় , কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় , তাই সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় । তবে চিঠিপত্রের মধ্য দিয়ে গুরুদেব বিজয়ার সম্পর্কে বেঁচে থাকে । ১৯২৪-১৯৪১ পর্যন্ত গুরদেব বিজয়ার মধ্যে অন্তত ৬০ টির মত চিঠি/টেলিগ্রামের আদান প্রদান হয় , সেসব আমি পড়েছি।  এগুলি  রবীন্দ্র  অনুরাগি, পাঠক,  গবেষক , সমালোচকদের কাছে  রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর  সম্পর্ক বিশ্লেষণে  খুব গুরত্ব পূর্ণ ভুমিকা পালন করে । আমার জানা লেখিকা কেতকী কুশারি   ডাইসন, কবি শঙ্খ ঘোষ এই বিষয়টিতে অনেক আলোকপাত করেছেন – এঁদের কাজ আমাদের সমৃদ্ধ করে ।

বিজয়া গুরুদেবের গল্প, কবিতা নিয়মিত আর্জেন্টিনায়  নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পাঠ করতেন । গুরুদেবের  অনেক ইংরেজি  লেখা সেখানের দৈনিক পত্রপত্রিকায় অনুবাদ করে লিখতেন আর তার জন্য তাঁর প্রাপ্য রয়্যালটির চেক গুরুদেবকে পাঠিয়ে দিতেন । কবিগুরুর শতবর্ষে গুরদেবকে নিয়ে তিনি লেখেন।

গুরুদেবের জীবনের শেষ কয়েক মাসে তাঁর আরোগ্য কামনা করে বিজয়ার  চিঠি/টেলিগ্রাম আসতো। ২২ শে শ্রাবণ কবির মহাপ্রয়াণের খবর সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ।  তার দুদিনের মধ্যেই কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের কাছে  এলো একটি  টেলিগ্রাম।

Thinking of him and of you all
-Victoria Ocampo

এই টেলিগ্রামের উত্তরে কবিপুত্র লিখেছিলেন –
Oct 17, 1941
Dear Madam,
Your cable conveying your grief at the death of my father made us realize intensely how much he had endeared himself in the minds of people far and near. With regards to you, his affection had never dimmed for a moment.
….
Sincerely yours
Rathindranath Thakur

গুরুদেব আর বিজয়ার সম্পর্ক কেমন ছিল সেসবের  আলোচনা করতে গিয়ে অনেকে অনেক তথ্যের উল্লেখ করেন। কিন্তু গুরুদেবই বলতেন তথ্য অনেক , কিন্তু সত্য এক । আমার মনে হয় সেই সত্যটি কবিপুত্রের উত্তরেই আছে। ‘With regards to you, his affection had never dimmed for a moment।’

রোমা রোঁলার লেখা গান্ধীজির জীবনী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্রিয় বই । এভাবেই তিনি গান্ধীজী নেহেরু আর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে পরিচিত হন । গান্ধীজির সত্যাগ্রহ আন্দোলন তাঁকে ভারতের প্রতি বেশ অনুরাগী করে তোলে । পরে আর্জেন্টিনা সরকারের নীতির বিরোধিতার জন্য ভিক্টোরিয়ার জেল হয় । ভারতবর্ষ থেকে নেহেরু  আর্জেন্টিনার  রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে অনুরোধ করেন।  ভিক্টোরিয়ার জেল মুক্তি হয় । নেহেরুর সায় পেয়ে আর্জেন্টিনা সরকার ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে ভারতে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূতের পদ  অলংকরণের   অনুরোধ করে। তিনি সবিনয়ে তা ফিরিয়ে দেন । তবে ১৯৬৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রীয় সফরে আর্জেন্টিনাতে যান । সেই সময় তিনি বিশ্বভারতীর আচার্য হিসেবে বিশ্বভারতীর  সর্বোচ্চ উপাধি দেশিকোত্তম দিয়ে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে সম্মানিত করেন।

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো  নানান  প্রবন্ধ , গল্প আর অন্য লেখালেখি সহ  সুর ম্যাগাজিন নিয়েই আজীবন ব্যস্ত থাকেন । তাঁর এই সুর ম্যাগাজিন  ১৯৩০ সাল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেয়।  দক্ষিণ আমেরিকার সাহিত্য আন্দোলন আর প্রসারের জন্য তিনি সত্তরের দশকে নোবেল পুরস্কারের জন্য  মনোনীত হন।  ১৯৭৯ সালের জানুয়ারী মাসে প্রায় ৯০ বছর বয়সে গুরুদেবের  বিজয়া পৃথিবীকে চিরবিদায় জানিয়ে  চলে যান ।

ভালোবাসার কোন বয়স হয় না।  সেজন্য ৬৩ বছরের কবির জীবনে ৩৩ বছরের ভিক্টোরিয়া এসেছিলেন – সেদিন তিনি  শুধু তাঁর রূপ বুদ্ধি নিয়েই আসেন নি – এসেছিলেন তাঁর ভালোবাসা নিয়ে । কবির কথায় নারীর ভালবাসা (woman’s love) –তিনি বুঝেছিলেন  রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধি দিয়ে জয়ের নন – কেবলমাত্র ভালোবাসা দিয়েই জয়ের । আর সেই ভালোবাসার  জোরেই তিনি কবির  হৃদয় জয় করেছিলেন ।  সেজন্যই হয়ত তিনি হতে পেরেছিলেন কবিগুরুর  বিজয়া ।   আর বিজয়াও গুরদেবের শেখানো শুধু একটি মাত্র বাংলা শব্দ বলতে পারতেন – ভালোবাসা ।  আমার   লেখা শেষের সময় হোল এবার । তাই কবিগুরুরই গানের লাইন মনে আসছে-
                       
“আমি রূপে তোমায় ভোলাব না, ভালোবাসায় ভোলাব।”

কৃতঞ্জতা স্বীকার :
In Your Blossoming Flower Gardens – Ketaki Kushari Dyson,
Letters between Rabindranath Tagore and Victoria Ocampo
পূরবী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img