হোমদেশEditorial : সোনিয়ার কৌশলী ঘোষণায় কোণঠাসা বিদ্রোহীরা

Editorial : সোনিয়ার কৌশলী ঘোষণায় কোণঠাসা বিদ্রোহীরা

Editorial : সোনিয়ার কৌশলী ঘোষণায় কোণঠাসা বিদ্রোহীরা

দলে বিক্ষুব্ধদের মুখ বন্ধ করতে নিজেকেই কংগ্রেসের পূর্ণ সময়ের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi)। কিন্তু তাতে কি জি-২৩ অর্থাৎ ২৩ জন বর্ষীয়ান বিক্ষুব্ধ নেতা রণে ভঙ্গ দেবেন, নাকি সোনিয়ার প্রতি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবেন? কপিল সিব্বল, গোলাম নবি আজাদের মতো প্রবীণ নেতারা যেভাবে বারবার দলের সংস্কারের দাবি তুলে চলেছেন, তাতে কংগ্রেস কর্মসমিতির বৈঠকে নিজেকে সর্বক্ষণের সভাপতি ঘোষণা করা ছাড়া সোনিয়ার সামনে অন্য কোনও পথ ছিল না।

কিন্তু এতে কি আদৌ সমস্যার জট খুলবে? নাকি সঙ্কটে-জর্জরিত কংগ্রেসে নতুন কোনও সমস্যার জন্ম দেবে? বিশেষত রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার (Priyanka Gandhi) ভূমিকা নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন : সোনিয়ার কৌশলী ঘোষণায় কোণঠাসা বিদ্রোহীরা

২০১৯-এ লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের দায় কাঁধে নিয়ে দলের সভাপতির পদ ছেড়েছিলেন রাহুল। বর্তমানে তিনি কেরলের ওয়ানাড় থেকে নির্বাচিত একজন সাংসদ মাত্র। এছাড়া দলের কোনও পদে নেই তিনি। অন্যদিকে, প্রিয়াঙ্কা উত্তরপ্রদেশের (Uttarpradesh) দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সাধারণ সম্পাদিকা।

কিন্তু দলের সাংগঠনিক সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কাই। পাঞ্জাবের (Punjab) সাম্প্রতিক সঙ্কটে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। নভজ্যোত সিং সিধুকে পাঞ্জাবে কংগ্রেসের সভাপতি পদে বসানোর নেপথ্য ছিলেন প্রিয়াঙ্কা, যার জেরে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। আর অমরিন্দরের জায়গায় দলিত সম্প্রদায়ের চরণজিৎ সিং চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রী করার পিছনে মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন রাহুলই।

সিধুকে সভাপতি করা এবং নতুন মুখ্যমন্ত্রী বাছাই, এই দুটি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সোনিয়ার কোনও ভূমিকা ছিল না। কিন্তু পাঞ্জাবে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে এই দুটি সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনও সন্দেহ নেই, জাতীয় রাজনীতিতে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের অবস্থা খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে দলের সভাপতি নির্বাচন হওয়ার কথা। তাই অনেকটা সতর্ক হয়েই এগোতে হচ্ছে সোনিয়াকে।

তাই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির (Congress Working Committee) বৈঠকে বিদ্রোহীদের তোলা গুরুতর প্রশ্নগুলির উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন সোনিয়া। যেমন, দলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিক্ষুব্ধ শিবিরের অন্যতম প্রধান মুখ কপিল সিব্বল। কিন্তু সোনিয়া এই প্রশ্নের ধারেকাছে যাননি। দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন পদ্ধতি মানা হবে, সে সম্পর্কে কোনও আলোকপাত করেননি কংগ্রেস সভানেত্রী। শুধু তাই নয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে তাঁর দুই সন্তানের ভূমিকা নিয়েও নীরবতাকেই শ্রেয় বলে মনে করেছেন সোনিয়া। দলের সঙ্কটকালে বরাবরই রক্ষণাত্মক ভূমিকা নিয়ে এসেছেন সোনিয়া। এবারও তার অন্যথা হয়নি।

কর্মসমিতির বৈঠকের পর বিক্ষুব্ধ শিবিরের একাধিক নেতাকে আড়ালে বলতে শোনা গেছে, “সোনিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে আমরা কখনোই প্রশ্ন তুলিনি। সোনিয়াজিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। রাহুলের ইস্তফার পর আমরাই তো তাঁকে সভাপতি পদে বসিয়েছি।”

কর্মসমিতির বৈঠকের শুরুতে সোনিয়া যা বলেছেন, তারপর অন্যদের খুব বেশি বলার ছিল না। গত বছরের অগাস্ট মাসের বৈঠকে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা যেভাবে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন, এবার সেরকম কিছু ঘটেনি। বলা যায়, অনেকটা রক্ষণাত্মক পথে আক্রমণ থেকে নিজের পরিবারকে শুধু রক্ষাই করেননি, সেইসঙ্গে নিজেকেই আগুনের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।

বলা বাহুল্য, সোনিয়ার ভাষণের পর বিক্ষুব্ধ নেতাদের সেই অর্থে কিছু বলার ছিল না। তাঁরা মুখও খোলেননি। তবুও রাহুলকে নিয়ে ধোঁয়াশা থাকছেই। তিনি দলের সভাপতি পদে ফিরবেন? পাশাপাশি আরেকটি প্রশ্ন উঠে আসছে। তা হল, এখন থেকে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত প্রিয়াঙ্কার ভূমিকা কী হবে?

সম্প্রতি বেনারস সফরে গিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। অনেকটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢঙে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরেছেন। তরবারি মিছিলে যোগ দিয়েছেন। দুর্গার কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন। তিনি যে নবরাত্রির উপোস করছেন, সেকথাও জানিয়ে দেন প্রিয়াঙ্কা। রাজনৈতিক মহলের খবর, ২০২৪-এ বারাণসীতে মোদির বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কাই প্রার্থী হবেন। তাই আগে থেকেই তার জমি তৈরি করছেন রাজীব-কন্যা।

একটা কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, প্রথম রাউন্ডের যুদ্ধে জিতে গিয়েছেন সোনিয়া। দলের বর্তমান কাজকর্ম নিয়েই কংগ্রেসের ভিতরে যতই অসন্তোষ থাক, সবকিছুই নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন তিনি। সন্তানদের ওপর তাঁর আঁচ পড়তে দেননি। বিক্ষুব্ধ নেতারা দলে যৌথ নেতৃত্বের দাবি তুললেও, তিনি যে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।

১৯৯৮ সালে এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের দায়িত্বভার তুলে নিয়েছিলেন সোনিয়া। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ২০০৪ সালে দলকে ক্ষমতায় এনেছেন। টানা ১০ বছর সেই সরকার দিল্লির কুর্সিতে ছিল। শুধু তা-ই নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহুধাবিভক্ত বিরোধী শক্তিকে এক মঞ্চে আনতে পেরেছেন। গান্ধী পরিবারের বধূ থেকে নিজেকে নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। তাই তাঁর নেতৃত্ব গুণ নিয়ে দলের মধ্যে কোনও প্রশ্ন নেই।

অদূর ভবিষ্যতে সোনিয়াকে কি চ্যালেঞ্জ মুখে ফেলতে পারেন বিদ্রোহী ২৩ নেতা? একসময় সোনিয়ার বিদেশিনী পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শরদ পওয়ার। কংগ্রেস ছেড়ে তিনি জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপি নামে দল গড়েছেন। মহারাষ্ট্রে সেই দল সরকারের অংশীদার। কংগ্রেস-এনসিপির মধ্যে জোটও রয়েছে। মহারাষ্ট্রে পাওয়ারের জনভিত্তি রয়েছে। সেই সুবাদে কংগ্রেস ছাড়লেও, তিনি রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন।

কিন্তু বর্তমানে দলে যাঁরা নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের কারোরই সেরকম সাংগঠনিক ভিত্তি বা জনপ্রিয়তা নেই, যার জেরে সোনিয়াকে চাপে ফেলতে পারেন। তাছাড়া, সোনিয়া যতটা দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন, তাতে কেউ চ্যালেঞ্জ তো দূরের কথা, বিদ্রোহী নেতাদের চুপ থাকা ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। অর্থাৎ কংগ্রেসের লাগাম আপাতত গান্ধী পরিবারের হাতেই থাকছে। এর অন্যথা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img