হোমরাজ্যভূতের ভয়! সেদিন যা বলেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়

ভূতের ভয়! সেদিন যা বলেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়

ভূতের ভয়! সেদিন যা বলেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়

ভূত নিয়ে তাঁর ভীতি ছিল সর্বজনবিদিত। এ নিয়ে তাঁর কোনও লুকোচাপাও ছিল না। অকপটে বহুবার বলেছেন। তবে কখনও কিছু লেখালেখি করেননি। এই পোর্টালের গত বছরের পুজো সংখ্যায় ভূত নিয়ে কলম ধরেছিলেন রাজ্যের সদ্য প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

ভূত মানে অতীত। অতীত , বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, গতকাল আজ ও আগামিকাল। বিখ্যাত সেই ইংরেজি ফিল্ম ইয়েস্টার্ডে টুডে টুমোরো।

আমরা জানি, অতীত থেকেই বর্তমানে আসা। এই আজকের মুহূর্ত, প্রতি পল, দিনরাত শুরু হয় আর শেষ হয়ে যায়। অতীত হয়ে যায়। আবার ভোরের আলো ফোটে, নতুন দিন। প্রতিটি মুহূর্ত নতুন।

কালকের দিন আজ নয়। পরের দিনটা আসবে। এই আজকের দিন অতীতে চলে যাবে। বিগত দিন বলা হবে। কাল যা যা ঘটেছিল আজ তা ঘটবে না। আগামীকাল যা ঘটবে, তা অজানা ও নতুন। তা হলে কাল যে কথা আপনাদের সঙ্গে হয়েছিল, যা করেছিলাম সব কিছুই কি মুছে গেল?

আরও পড়ুন : Subrata : জনপ্রিয় রাজনীতিক, বরাবরই ছিল ভূতের ভয়

আজ যা হচ্ছে, যা বলছি , করছি সবই গতকালের সূত্র ধরেই। শুধু গতকালের সে মুহূর্ত, সময় , পল নেই। বয়স একদিন বেশি হয়েছে।ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখ বদলে গেছে।

গত কালের সব কিছুই চলে এসেছে আজকে। হারিয়ে গেছে কালকের ঠিক ওই সময়কাল। আবার হারিয়ে যায়ও নি। সেইগুলি অন্যভাবে চলে এসেছে আজকে। ছোঁয়া যাবে না। কিন্তু আছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।”

আরও পড়ুন : Subrata : বঙ্গ রাজনীতিতে নক্ষত্র পতন, প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়

সকালে তো নভোমন্ডলের কোথাও তারা নক্ষত্র চাঁদের দেখা মেলে না। সন্ধ্যায় ঠিক দেখা হয় ওদের সঙ্গে।ওরা ছিল “দিনের আলোর গভীরে”। মিশরে পিরামিড আছে। রানি ক্লিওপেট্রা, তুতানখামেন , রাশিয়ার জার, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লর্ড ক্লাইভ নেই। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল আছে। গঙ্গা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র বয়েই চলেছে। যেমন টেমস কি নীল, চিনের হোয়াং হো, ইয়াং সি নদী, আমাজনের সেই অরণ্যের প্রাচীন বৃক্ষটি কি আজও রয়েছে। পৃথিবীর জন্মের পরে লক্ষ লক্ষ বছর পেরিয়ে গেছে।

আজ নতুন পৃথিবী। কিন্তু সেদিনের সব তো মুছে যায়নি। এই রহস্যময় মহাবিশ্বের সামান্যই আজ জানা। অজানা, অজ্ঞাত প্রায় সব আজও। কেন, কী, কি করে, কি ভাবে কোন মুহূর্তে কোন অনুপলে কি ঘটেছিল, প্রাণের শুরু, অতীত, বর্তমান – কালের সঙ্গে কালের যোগসূত্র দার্শনিক, কবি, সাহিত্যের সঙ্গে বিজ্ঞানেরও বিষয়। বহু গবেষণা হচ্ছে সারা পৃথিবীতে।

আমাদের শাস্ত্রে, সাহিত্যে সঙ্গীতে, গবেষণায় এই বিষয়ে চর্চার বহু উদাহরণ আছে। বাস্তব, অবাস্তব, পরাবাস্তব বিষয় নিয়ে বহু আলোচনা , গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে।

আমার মনে পড়ছে তারাপ্ৰণব ব্রহ্মচারীর কথা। উনি খুব উঁচু মার্গের সাধক ছিলেন, তান্ত্রিক ছিলেন । কিন্ত তথাকথিত তান্ত্রিক তিনি ছিলেন না। পঞ্চমকারের সাধনার পথে তিনি ছিলেন না। তাঁর বইয়ে পরলোক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক তথ্য আছে।

ব্যক্তিগত জীবনে আমার এই ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতা আছে। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে শুনশান ঘরে রাতের বেলায় কিছু ঘটনাকে আজগুবি বলে তো উড়িয়ে দিতে পারি না। এক আত্মীয়ের বাড়িতে প্ল্যানচেটের সময়ে কী ঘটেছিল তাই বা ভুলি কী করে?

রাইটার্স বিল্ডিংস পুরনো ব্রিটিশ বাড়ি। ওটা ছিল সায়েবদের আস্তানা। কত বিশাল বাড়ি, কত ঘর, বারান্দা, ওপরে বিশাল ছাদ। প্রত্যেক ঘরে আলাদা চাবি আছে। সেই কাজ করেন একদল কর্মী। আমার কয়েক রাতের অভিজ্ঞতার পরে ওদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওরা বলেছিল, অনেক কথা। অনেক দিন ওদের নানারকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। ছাদে মাঝরাতে ওরা যায় না ভয়ে। সন্ধ্যায়, ভোরে যায় পতাকা নামাতে ও তুলতে। ওরা গরমের সময়ে দু-একবার ঘুমাবার জন্য গিয়ে অশরীরী কিছু দেখেছেন অনেকবার। ভয়ে ছাদে যাওয়া বন্ধ করে দেন।

আমি সেই সময়ে প্ল্যানচেট বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু সেই দিন অত্যন্ত খোলা মনে আমি হাজির ছিলাম। গভীর রাতে সেই প্ল্যানচেট হয়েছিল। প্রবীণ একজন করছিলেন। খাতায় কোনও আত্মা আসছিলেন, দু-একটা কথা লেখা হচ্ছিল। কেউই বেশিক্ষণ থাকতে চাননি। কষ্ট হচ্ছে বলছিলেন। এরই মধ্যে আচমকা সেই পুরনো বাড়ির বন্ধ জানলা দরজায় অস্বাভাবিক শব্দ শুরু হয়। যেন কেউ সব লন্ডভন্ড করতে চাইছে। আতঙ্কের পরিবেশ। প্রবীণরা বললেন, দুষ্ট আত্মা ঢুকে পড়েছে। তাঁরা প্ল্যানচেট বন্ধ করে দিতে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। এটা তো আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।

আমরা মনে করি, রবীন্দ্রনাথ একজন দার্শনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ছিলেন। তাঁর বহু লেখায় আত্মা পরলোক অশরীর উপস্থিতির কথা আছে। তিনি প্ল্যানচেট করতেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্নেহের অকাল প্রয়াত পুত্রের সঙ্গে প্ল্যানচেটের মাধ্যমে কথা বলতেন বলে জানা যায়।

স্বামী অভেদানন্দের বিখ্যাত বই “মরণের পারে “, স্বামী প্রণবানন্দের লেখা বা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহু রচনায় পরলোক, ইহলোকের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরলোকে বিশ্বাস, অশুভ শক্তির কথা গল্প উপন্যাসের পাঠক মাত্রেই জানেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে পুনর্জন্ম, লেখাতেও পরলোক ইহলোকের প্রসঙ্গ আছে।

এঁদের মত মানুষদের পরলোক চর্চা কি উড়িয়ে দেবার বিষয় ? এঁরা তো কেউ রাজনীতি করতেন না। তাঁরা এম এল এ, এম পি বা মন্ত্রী হবার কথা ভাবেননি। অথচ আমার মত কোনও রাজনৈতিক কর্মী এই বিষয়ে কথা বললে মানুষ হয়ত উড়িয়ে দেন। না না রকম ঠাট্টা করতেও পারেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত বা ভারতের সাধকসাধিকার পাঠকদের এ বিষয়ে জানা আছে। খুব উঁচু মার্গের সাধুসঙ্গ করার দুর্লভ সৌভাগ্য কম মানুষের হয়। কিন্তু তাঁদের আশীর্বাদের সৌভাগ্য হলে পৃথিবীর কত না জানা রহস্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। একটা হালকা আঁচ মিলতে পারে। ইহলোক, পরলোক, আত্মা, ভবিষ্যৎ অতীত কত যে রহস্য..! স্বামী অভেদানন্দের লেখায় অনেক তথ্য আছে তো।

ব্যক্তিগত জীবনে এইসব বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে বহুবার। সব মিলিয়ে বলতে পারি, আমি এই বিষয়টা নিয়ে যা ভাবি ও বিশ্বাস করি, অনেকেই তা করেন। অনেকে আবার অবৈজ্ঞানিক বলে উড়িয়ে দেন। ঠিকই তো, ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন – যত মত তত পথ।

আমি বলতে চাই, বিষয়টি মোটেই হালকা করে নেবার মত নয়। ব্যক্তিগত জীবনে আমার বহুবার নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। এটা একটা ভাবনা ও বিজ্ঞানের বিষয়। আমি এই বিষয়টি নিয়ে ভাবি, বিশ্বাস করি। অনেকেই তা করেন। অনেকেই আবার অবৈজ্ঞানিক বলে উড়িয়ে দেন।

বলতে চাই , তাঁরা উড়িয়ে দিতেও পারেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের বাণী উল্লেখ করে শেষ করি: যত মত, তত পথ..।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img