শ্যামল সান্যাল
না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নয়।
সুনীল বারুই।
নীরা কে এই সুনীলের জানা নেই।ওই সুনীলের ও সঠিক জানা ছিল না।তিনি খুঁজেছেন নীরা কে,জীবনানন্দ বনলতা সেন কে নাটোরে হয়ত ছেড়ে এসেছিলেন।
এই সুনীল বারুই আলু পটল পালং নটে শাক পেঁয়াজ কুমড়ো নিয়ে অজস্র কথা বলতে পারেন।নীরা বা বনলতা সেন তাঁর অভিধানে গরহাজির।
সল্টলেকের তিন নম্বর সেক্টরে ফাল্গুনী বাজারে তাঁর দোকান।বছর পঞ্চাশ হবে বয়স।কাঁচা পাকা চুল, ছোট্ট খাট্টো মানুষ।সকালে দোকান খুলে হাঁক দেন, পচা পাতকো অনাজ নেবেন তো চলে আসুন, নো দরাদরি..।
সুনীলের স্ত্রী আর দুজন কাজের ছেলে হাত লাগায়।খদ্দেরদের সঙ্গে আড্ডা মারতে মশগুল সুনীলের হাতে দাঁড়ি পাল্লায় ওজন হতে থাকে একই সঙ্গে আলু কুমড়ো লাউ সব্জি..।
বেশিরভাগই পূরন খদ্দের।তাঁদের সঙ্গে আড্ডায় চা, বিড়ি চলে,মজা মস্করা বাড়ির খবর লেনদেন হাসি , সুনীলের দোকান জমজমাট। রাসভারি সরকারি আমলা কি বিখ্যাত অভিনেতার পাশে রাজনৈতিক নেতা আর ও পাড়ার মাসি , বৌদি অন্তত একবার সুনীলের দোকানে হাজিরা দেবেনই, বিশেষ করে রোববার।
সুনীলের দোকানে মাঝে মাঝে দেখা যাবে একটি যুবককে, সেও আলু বেচার কাজ করতে করতে স্মার্ট ফোনে ফিন্যান্স , প্রিমিয়াম এসব নিয়ে চোস্ত হিন্দি ইংরেজিতে কথা বলছে।
এক মেয়ে খদ্দের কে হেসে বলছে জেঠু ওই লাউটা কচি ওটা দেব কি..
ছেলেটির নাম গণেশ, মেয়ের নাম গীতা।ওরা সুনীলের ছেলে মেয়ে।
গণেশ মুম্বাইতে থাকে,একটা বহুজাতিক আর্থিক সংস্থার বড় কর্তা।গীতা কলকাতার বিখ্যাত হাসপাতালের সিনিয়ার নার্স।
গণেশ ও গীতা এই দোকানে বসে অনাজ বিক্রির কাজে তাদের বাবাকে হেল্প করতে করতে রাতের কলেজে পড়ত। পড়ার পাশে পরীক্ষা। নিজেদের তৈরি করেছে।সুনীল আর ওদের মা শুধুমাত্র মদত জুগিয়েছন। ওদের লেখা পড়া করাটা জরুরি জীবনে বড় হতে এই কথাটা জানত।কিন্তু কড়া বাবা সুনীল ওদের রোজ এই দোকানে বসিয়ে জীবনের লড়াইয়ের ট্রেনিং দিয়েছে হাতে কলমে।মাটি কামড়ে পড়ে থাকা, দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধের মহড়া হয়েছে রোজ রোজ।কুঁড়ে ঘরে টিমটিমে আলোয় পড়ে , দুবেলা কোনরকমে দুমুঠো খাওয়ার ব্যবস্থা করতে করতে সুনীল বলত,ঠিক করে পড়বি, আলুও বেচবি।ফাঁকি দিবি না, কাউকে ঠকাবি না।মাটিতে পা রেখে চলবি।
মেদিনীপুরে সুনীলের বাড়ি।চাষবাস আছে। মাঝে মাঝেই যায়,আবার ছেলে গণেশের বাড়ি বোম্বেতেও নাতি নাতনির জন্য চলে যায় কর্তা গিন্নী মিলে।তখন দোকান সামাল দেয় গ্রামের থেকে আসা দুটি ছেলে।
তা সুনীল আজও কেন আনাজ নিয়ে হাঁক ডাক করে আ
নাজ বেচে…
এক গাল হেসে বিড়ি তে আগুন দিয়ে বলে, কি করব এইটা তো আমার প্রান। ছেলে মেয়ে নাতি নাতনি নিয়ে সুখে আছি।কিন্তু এই সবজি বেচতে না বসলে মন খারাপ লাগে, কত মানুষের সঙ্গে গপ্প করি, বলেন তো এ মজা আর কোথায় পাবো…।
সুনীলের ব্যস্ততা বাড়ে, নতুন খদ্দের যে কচি লাউ খুঁজছেন…।