দেবী দুর্গার পর দেবী লক্ষ্মী। আকাশে বাতাসে এখনও উৎসবের রেশ। আকাশ কখনও নির্মল, তো কখনও মেঘে ঢাকা। বৃষ্টির আসা-যাওয়া চলছেই। আর এর মধ্যেই নদিয়ার তাহেরপুরে লক্ষ্মী সরা ঘিরে লক্ষ্মী লাভের আশা করছেন তাহেরপুরের লক্ষ্মী সরার বিক্রেতারা।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ থেকে আসা কিছু মানুষের হাত ধরে এখানে শুরু হয়েছিল এই সরা শিল্পের কাজ। প্রধানত পারিবারিক পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁরা। লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে সরার যে চাহিদা থাকে, আজও তার যোগান দিয়ে আসছেন বিগত কয়েক দশক ধরে এঁরাই – পরম্পরাগতভাবে।
এই সরাচিত্রের বিক্রিবাটার ওপর নির্ভর করে সংসার চলে এই পেশার ওপর নির্ভরশীল অনেক শিল্পীর। অনেকেই এর পাশাপাশি অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত নন। বৃষ্টির কারণে সমস্যা হলেও এ বছর লক্ষ্মী সরা বিক্রি মোটামুটি ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে সরাপটের শিল্পী ও বিক্রেতাদের মুখে।
এই পেশার সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের কথায়, এই লক্ষ্মী সরার চাহিদা রয়েছে। সেই হিসেবে শিল্পী কম। তেমন লাভজনক না হওয়ায় অনেকেই এই পেশার সঙ্গে সংযুক্ত হতে চাইছেন না। তাই চাহিদা থাকলেও যোগানে সমস্যা হচ্ছে।
এখান থেকেই কলকাতা, আসাম- সহ বিভিন্ন জায়গায় যায় দেবী লক্ষ্মীর চিত্রপট আঁকা এই মাটির সরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা যে বাঙালিদের মধ্যে সরায় দেবী লক্ষ্মীর পুজো করার রীতি প্রচলিত আছে মূলত তাঁরাই এই সরা কেনেন। অনেকে আবার শিল্পকর্ম হিসেবেও এগুলিকে সংগ্রহে রাখেন। তাই সারা দেশ জুড়েই শিল্পীদের আঁকা এই সরা ছড়িয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে পুরাণ গবেষক ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মৃৎপাত্রের ঢাকনার ওপর পটুয়াদের শিল্পকর্ম এই লক্ষ্মী সরার উৎস। অনুমান করা যায় – একসময় বৌদ্ধ তান্ত্রিক উপাসনায় যে সরা চিত্রের বিষয় ছিল এর সঙ্গে তা মিশে গেছে। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্রে রেখে পূর্ববঙ্গে এই লক্ষ্মী সরার উদ্ভব হয়েছিল। এখন তাহেরপুরের যে সরা – তা আসলে কিন্তু সরাপটের একটা আঞ্চলিক শৈলীর রূপ নিয়েছে। এর গুরুত্ব যথেষ্ট।



