হোমPlot1Rathyatra: বনেদি কলকাতার রথযাত্রা

Rathyatra: বনেদি কলকাতার রথযাত্রা

Rathyatra: বনেদি কলকাতার রথযাত্রা

শুভদীপ রায় চৌধুরী, আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর সেই পার্বণগুলির অন্যতম রথযাত্রা। পুরীতে রথযাত্রার সাড়ম্বরতা চোখে পড়লেও, বঙ্গের রথও বহু প্রাচীন। শ্রীরামপুরের মাহেশ ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথযাত্রা। এমনকি কলকাতার বনেদি বাড়ির রথও বহু পুরনো। জানবাজারের রানি রাসমণি হোক, কী কলকাতার সাবর্ণ রায় চৌধুরী, প্রত্যেকের বাড়িতেই ধুমধাম করে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়। আবার শোভাবাজার রাজবাড়িতে এই রথের দিনই কাঠামোপুজো অনুষ্ঠিত হয়। সব মিলিয়ে বনেদি কলকাতার রথযাত্রা ধুমধাম করে পালিত হয়।

রানি রাসমণির বাড়ির পুরনো রথটি ছিল রুপোর। সেটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ১ লক্ষ ২২ হাজার ১১৫ টাকা। রথের সঙ্গে ছিল দু’টি ঘোড়া, একটি সারথি এবং চারটি পরী। সেগুলিও রুপোর। এই বাড়ির রথযাত্রা শুরু হয় ১৮৩৮ সালে। রথযাত্রা উপলক্ষে সেই সময় জুঁই ফুলের মালা কেনা হত কম করে আড়াই থেকে তিন মণ। তবে আগে জানবাজারে রাসমণির বাড়িতে হলেও, এখন এই রথযাত্রা হয় দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে। রাসমণির গৃহদেবতা রঘুনাথ জিউকে কেন্দ্র করেই এই রথযাত্রা পালিত হয়।

আবার বড়িষার সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের রথও বহু প্রাচীন। ১৭১৯ সালে বড়িষায় রায় চৌধুরী পরিবারের রথযাত্রা শুরু করেন রায় কৃষ্ণদেব মজুমদার চৌধুরী। সেই সময় ৯ চূড়া বিশিষ্ট রথে শালগ্রাম শিলা নিয়ে যাওয়া হত বেনাকি বাড়িতে। পরে ১৯১১ সালে বড়বাড়িতে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্রহ এবং একটি ত্রিতল রথ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৩৪ থেকে চতুর্ধা বিগ্রহগুলিকে হীরালাল বসুর বাড়িতে (মাসির বাড়ি) নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৮৪ সালে সর্বজনীন সহযোগিতায় পুরী থেকে কারিগর এনে নতুন রথ নির্মাণ করা হয়।

শোভাবাজার রাজবাড়িতে আবার রথের দিনই  দুর্গা প্রতিমার কাঠামো পুজো হয়। এর পাশাপাশি শালগ্রাম শিলাকে রথে অধিষ্ঠান করিয়ে ঠাকুরদালানেই সেই রথ টানা হয়। প্রাচীন রীতি মেনে আজও দুর্গার মূল কাঠামোকে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়। আর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনার পাশাপাশি পুজো হয় জগন্নাথদেবেরও। 

আবার বউবাজার অঞ্চলে গোবিন্দ সেন লেনে জগন্নাথ বিগ্রহ ও রথ প্রতিষ্ঠা করেন চুনিমণি দাসী। পাঁচ চূড়াবিশিষ্ট ত্রিতল এই রথে এখনও সাবেকী শিল্পের ছোঁয়া দেখা যায়। রথের চারদিকে আছে চারটি পুতুল এবং রথের গায়ে আঁকা রয়েছে দেবদেবীর ছবি। কথিত আছে, এক বার পুরীর নব কলেবরের সময় অবশিষ্ট এক খণ্ড নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছিল এই পরিবারের নিমকাঠের জগন্নাথ। আর এই বিগ্রহের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত আছেন শালগ্রাম শিলা। পরিবার সূত্রে খবর, স্নানযাত্রার পরে হয় বিগ্রহের অঙ্গরাগ। আগে রথের দিন এবং উল্টোরথের দিন পথে জগন্নাথ বেরোতেন। এখন আর রথ রাস্তায় বেরোয় না। তাই বাড়ির উঠোনেই রথ টানা হয়।

আবার উত্তর কলকাতার দর্জিপাড়ায় রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়িতে দীর্ঘদিন হয়ে আসছে রাজরাজেশ্বরের রথযাত্রা। বলাবাহুল্য তিনিই এই বাড়ির কূলদেবতা। রীতি অনুযায়ী, রথের দিন সকালে চামর দিয়ে বাতাস করতে করতে তিন বার রথকে প্রদক্ষিণ করেন। পুজোয় করবী ফুল দিয়ে হোম করা হয়। রথ  উপলক্ষে দেওয়া হয় হরির লুঠ। রথের আর এক ঐতিহ্য ইলিশ বরণ। নোড়ার উপর জোড়া ইলিশ রেখে ছোট মাছটির মাথায় সিঁদুর দেওয়া হয়। পরে ধানদূর্বা দিয়ে মাছ দু’টিকে বরণ করা হয়, এও এক প্রাচীন রীতি।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img