হোমফিচাররোদচশমা

রোদচশমা

রোদচশমা

ডা. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার

কল্যাণ একজন সফল মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। তবে পরিশ্রমও করতে হয় প্রচুর। প্রায় সারাদিনই বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বারে ঘোরাঘুরির কাজ। দুপুর রোদে বাইক চালানোর সময়ে চোখের বেশ অসুবিধা হচ্ছিল কিছুদিন যাবৎ। সম্প্রতি সিটি সেন্টারের দোকান থেকে একটা সানগ্লাস কিনেছে। দেখতেও সুন্দর, চোখের ঝামেলাটাও মিটেছে।


রোদচশমা বা সানগ্লাস কেবলমাত্র ফ্যাশনই নয়, এটা এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ। সানগ্লাস সূর্য্যের প্রখর তাপ ও নানা রকম ক্ষতিকারক আলোকরশ্মির প্রভাব থেকে চোখকে যেমন রক্ষা করে তেমনি কলকারখানার দূর্ঘটনা থেকে চোখের সুরক্ষাতেও এর ভূমিকা অপরিসীম। চোখের চিকিৎসাতেও সানগ্লাসের ব্যবহার দেখা যায়। তাছাড়া ফ্যাশানে দুনিয়ায় সানগ্লাসের ভূমিকা তো অনস্বীকার্য।

ব্রিটিশ চিকিৎসক James Ayscough 1752 সালে চশমায় বিভিন্ন রঙের কাঁচের ব্যবহার শুরু করে আধুনিক সানগ্লাসের সূচনা করলেন। 1920 সাল থেকে সানগ্লাসের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠলো, বিশেষ করে চিত্রতারকাদের মধ্যে। এই সানগ্লাসগুলি ছিলো বহুমূল্য। কেবলমাত্র সমাজের উচ্চবিত্তরাই এগুলি সংগ্রহ করতে পারতেন। 1929 সালে অপেক্ষাকৃত কম দামের হালকা আর টেঁকসই প্লাস্টিকের সানগ্লাস বাজার দখল করে নিল। 1936 সালে আবিকৃত হল পোলার‍য়েড লেন্সের সানগ্লাস। আমেরিকার 31% লোক সানগ্লাস ব্যবহার করেন। ভারতে এখনও এই ধরণের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

সানগ্লাসের ব্যবহার

  1. সানগ্লাসের প্রধান কাজ বাইরের উজ্জ্বল চোখ ধাঁধানো আলো থেকে চোখকে বাঁচানো।
  2. ধূলোবালি, ময়লা, তীব্র হাওয়া থেকে চোখে রক্ষা করা।
  3. ফ্যাশান এবং নিজের সৌন্দর্য্য ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করা।
  4. চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার।

সানগ্লাসের উপকারিতা

• রোদ থেকে সুরক্ষা: সানগ্লাস চোখকে সূর্য্যের ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি চোখের ছানি, ক্যান্সার, বার্ধক্য জনিত ম্যাকুলার ক্ষয় (ARMD) ইত্যাদি নানা ধরণের চোখের অসুখের অন্যতম কারণ। এছাড়া অতিরিক্ত সূর্য্যের আলোতে চোখের চামড়া কুঁচকিয়ে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। ভালো সানগ্লাস আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে 100% প্রতিহত করতে পারে।
• গ্লেয়ার থেকে সুরক্ষা: বরফের পাহাড়, জলের উপরিতল, গাড়ির উইন্ডশিল্ড বা চকচকের রাস্তা থেকে প্রতিফলিত চোখ ঝলসানো সূর্য্যের আলো বা গ্লেয়ার চোখকে ঝাপসা করে দেয়। এর ফলে চোখ কুঁচকিয়ে যায়, মাথা ধরে। সানগ্লাস, বিশেষ করে পোলারাইজড সানগ্লাস এ ক্ষেত্রে খুবই উপকারী।
• বাধার সুরক্ষা: সানগ্লাস চোখ এবং পারিপার্শিক আবহাওয়ার মধ্যে প্রাচীর হিসাবে কাজ করে। অতরিক্ত হাওয়ায় কর্ণিয়া শুকিয়ে চোখের অস্বস্তি শুরু হয়। কণ্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে সানগ্লাস চোখকে অতিরিক্ত আরাম দেয়। সানগ্লাস হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো ধুলোময়লা, পাথরের কুঁচি, পরাগ ইত্যাদির আঘাত এবং এলার্জি থেকে থেকে কর্ণিয়াকে রক্ষা করে।
• চোখ এবং মাথাব্যাথা থেকে রক্ষা: Pupil সংকুচিত-প্রসারিত হয়ে চোখে আলো প্রবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে। তীব্র আলোতে Pupil অতিরিক্ত সংকুচিত হয়, চোখ কুঁচকিয়ে যায়। এর ফলে মাথাব্যাথা ও চোখ টনটনানি শুরু হয়। সানগ্লাসের ধূসর লেন্সের জন্য চোখে বেশী আলো প্রবেশ করতে পারেনা, Pupil প্রসারিত অবস্থায় থেকে দৃষ্টিকে স্নিগ্ধ রাখে।

সানগ্লাসের অপকারিতা

• সানগ্লাস পরলে দৃশ্যবস্তুকে খালি চোখ বা চশমার মত স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল দেখায় না। ফলে চোখ সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
• সানগ্লাস আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি প্রতিরোধক না হলে চোখের ক্ষতি হয়।
• সানগ্লাসের কালো লেন্সের জন্য চোখে আলো কম প্রবেশ করে, যায় ফলে Pupil প্রসারিত হয়ে থাকে। Pupil দীর্ঘক্ষণ প্রসারিত থাকলে অ্যাস্টিগমাটিজম বেড়ে যায়।
• সানগ্লাস পরলে গ্লুকোমা, রাতকানা, কালারব্লাইণ্ড ইত্যাদি রোগের অবনতি হয়।
• বেশীক্ষণ সানগ্লাস পরার ফলে অনেকের দৃষ্টি ক্ষমতা হ্রাস পায়।

ভালো সানগ্লাস কেনবার আগে নীচের জিনিসগুলি খেয়াল রাখুন

লেন্স পছন্দের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। কাঁচের চাইতে প্লাস্টিকের লেন্স হালকা, মজবুত আর দেখতেও সুন্দর হয়। তবে সানগ্লাসের লেন্স অবশ্যই 100% আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি প্রতিরোধক হতে হবে। কাজের প্রয়োজন অনুসারে অ্যান্টি-স্ক্রাচ, অ্যান্টি-রিফ্লেক্সান ইত্যাদি গুন যুক্ত করা যায়। গাড়ি চালানো, পর্বোতারহন, সমুদ্র ভ্রমণ ইত্যাদির জন্য পোলারয়েড লেন্স আদর্শ।

লেন্সের রঙ নির্বাচনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন রঙ আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করে।

o ধূসর ও সবুজ: দৃশ্যবস্তুর রঙের স্বাভাবিক বৈশিষ্টকে ফুটিয়ে তোলে।
o বাদামি: রঙের কিছুটা বিকৃতি ঘটায় কিন্তু কন্ট্রাস্ট বাড়িয়ে দেয়।
o ফিরোজা: মাঝারি আলোয় রঙের বিকৃতি না করেও কন্ট্রাস্ট বাড়ায়।
o হলুদ: দৃশ্যবস্তুকে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখায়, কিন্তু আলোর উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।
o অ্যাম্বার: দুরের বস্তুকে আরও সচ্ছভাবে দেখা যায়।
o নীল, বেগুনি: মুখ্যত সৌন্দর্য্যবর্ধক বা ফ্যাশান দুরস্ত সানগ্লাসে ব্যবহৃত হয়।

অর্থাৎ ফ্রেমের ডিজাইন, সাইজ, রঙ, লেন্সের বিশিষ্ট ইত্যাদি সব মিলিয়ে নির্বাচিত সানগ্লাসটি যেন আপনার সৌন্দর্য্য আর ব্যক্তিত্বে সঠিক ভাবে প্রকাশ করতে পারে। একইসঙ্গে সানগ্লাসটি পরে অত্যন্ত সহজভাবে সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পাওয়া আর সূর্য্যের ক্ষতিকারক রশ্মি আপনার চোখের সুরক্ষাও প্রয়োজন।

যারা চশমা পরেন তারা কি সানগ্লাস পরতে পারবেন না?

চশমায় পাওয়ার থাকলে সানগ্লাস পরা যায় না, এই ভেবে অনেকেই মন খারাপ করে থাকেন। কিন্তু তাদের জন্যও রয়েছে সুখবর। দোকানে যে সানগ্লাস বিক্রি হয় সেগুলির লেন্স প্লেন (Plain) বা পাওয়ারবিহীন। চশমায় পাওয়ার থাকলেও আজকাল সেই পাওয়ার অনুযায়ী পছন্দমত ফ্রেমে সানগ্লাসও করিয়ে নেওয়া যায়, যেগুলি দেখতে অবিকল দোকানের সানগ্লাসের মতই। যারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন তারা অবশ্য লেন্সের উপরে পাওয়ারবিহীন সানগ্লাস পরতে পারেন।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img