শ্যামল সান্যাল : “চিনের স্পাই” হান চুন ওয়েইকে নিয়ে নাজেহাল ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী। ওই লোকটি চিনের একটা বিশেষ ভাষায় কথা বলে। তার ল্যাপটপে যা কিছু আছে সবই ওই দুর্বোধ্য ভাষায়। এই ভাষার নাম “মান্দারিন”। এটা চিনের একটা বিশেষ অঞ্চলের ভাষা। আমাদের যেমন পুরুলিয়া, মালদহ, উত্তরবঙ্গের রাভা , দক্ষিণবঙ্গের অলচিকি, এইরকম বিভিন্ন এলাকার ভাষা একেবারে আলাদা।
চিনে গিয়ে দেখেছি, ওরাও নিজেদের বিভিন্ন প্রদেশের ভাষা জানে না। মূল ভাষায় ওরা কথা বলে, নইলে কেউ কিছুই বুঝতে পারে না। চিন বলতে তো একটা বিশাল মহাদেশ।
এবার এই চিনের স্পাইকে নিয়ে হৈচৈ নতুন কিছু নয়। এর আগেও কালিম্পং থেকে এমন কিছু লোকজনকে ধরা হয়েছিল। ভারতের নানা এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ ও গোয়েন্দারা বলছেন, এই লোকগুলো নেহাতই চুনোপুঁটি। এদের গুরুত্ব নেই চিনের কাছে। ওদেশে প্রচুর জোচ্চোর, চোর আছে। লোক ঠকিয়ে খায় তারা।
এই লোকটার আসল নাম হান কি না, সে কথাও নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারবে না। চিনে ঘোরার সময়ে অনেক মেরি, জন, উইলসন, রোজির সঙ্গে আলাপ হয়েছে। পরে জেনেছি ওরা নাম ভাঁড়িয়ে পরিচয় দেয়। আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বহু চিনে বাস করে। দুরন্ত ইংরেজি বলে। নাম আদৌ চিনে নয় । ওইসব দেশে বিয়ে করে সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়ে দিব্যি আছে। চিনাদের সবার মুখ একরকমের নয়। গোল, থেবরা, ছোট ছোট কুত কুতে চোখ, বেঁটে – এমন মানেই চিনা বা মঙ্গোলিয়ান, এমন একটা ধারণা আছে।
কিন্তু চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে লম্বা, স্লিম, টানা চোখ, নানা রকমের নারী পুরুষদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। চিনে নারীদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে ধারণা ভেঙে গেছে। রীতিমত সুন্দরী, আকর্ষণীয় তাঁরা। ইউরোপ, আমেরিকার মেয়েদের মত চিন্তাভাবনা, জীবনযাপন। পুরুষদের অনেকেই ম্যাচো, স্মার্ট। রাতে উদ্দাম পার্টি করে। দিনে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে। প্রেম করে। বিয়ে এড়িয়ে লিভ ইন খুব পপুলার। ডিভোর্সের ঘটনা জলভাত। একে অপরকে বাই বাই বলে সরে যায়। বিয়ের হ্যাপা কে পোহাবে, ওরাই বলেছে আড্ডায়। আর সন্তানের জন্ম? ওরা বলে, দেশের নিয়ম একটা সন্তানের বেশি নয়।
এখন নিয়ম বদলে চিনে কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশ, তিনটে সন্তান উৎপাদন করতে হবে। কারণ দেশে বুড়োদের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে। তাদের দিয়ে কোনও কাজ হয় না। তাই তিন সন্তানের বাবা মা হতেই হবে ।
এদের কথায়, আরে এখানে মোটামুটি খেয়ে দেয়ে বাঁচতে প্রচুর আয় করতে হয় সারা দিন খেটে। রাতের কয়েক ঘন্টা মড়ার মত ঘুমিয়ে আবার ছোটাছুটি। তো সন্তান জন্মাবে কী করে। একটা বাচ্চার দেখভাল, পড়ালেখার বিশাল খরচ। তিনটে বা দুটোর কথা তো ভাবাই যায় না।
এবার আবার ফিরে আসা যাক চিনে ফেলু মিত্তিরের কথায়। ওই লোকটা এখানে বাংলাদশে কত বছর বাস করেছে, হোটেল করেছে। এসবের সঙ্গে সে নাকি ভারতের গোপন খবরাখবর চিনে পাচার করছে, পুলিশ বলছে। বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন, এত বছর পরে ভারতের গোয়েন্দারা জানতে পারলো? এতদিন ওরা কী করছিল?
এই চিনেম্যান যে তার দেশের হয়ে কাজ করছিল তার প্রমাণ কই? এই ক্ষেত্রে চিনের বিরুদ্ধে ভারত কোনও অভিযোগ করেনি কেন?
চিনও এই গ্রেফতারি নিয়ে পাল্টা আপত্তি তোলেনি? তা হলে? চিনের বা ভারতের লড়াই ও গোয়েন্দাগিরির কাহিনী এখন কিন্তু এক উত্তেজক অবস্থায় আছে ।
ক্রমশ…