এ যেন টাইম মেশিনে চেপে কয়েক যুগ পিছিয়ে যাওয়া। গত শতকের ষাট, সত্তর আর আশির দশক। বাঙালির জীবনে সে ছিল এক অন্যদিন। আজকের রকেট গতির জীবনের সঙ্গে তাঁর মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
বইয়ের পাতায় সেই সময়কে তুলে এনেছেন বিশিষ্ট জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায়। একসময় দীর্ঘদিন একাধিক নামী কাগজে সাংবাদিকতা করেছেন বিশ্বরূপবাবু। তাঁর লেখনীতেও ধরা পড়েছে সাংবাদিকতার সেই অন্তর্দৃষ্টি আর মুন্সিয়ানা। ভাষা অত্যন্ত সহজ সরল প্রাঞ্জল।
বিশ্বরূপের ‘সেইসব ফেলে আসা দিনযাপন’ বইটি যেন ফেলে আসা সময়ের দিনলিপি। বাঙালির ফেলে আসা কৈশোরবেলা, ডাংগুলি মারবেল এক্কাদোক্কা, একান্নবর্তী পরিবার, গুলকয়লার উনুনে রান্না, আকাশবাণীতে খবর, ছায়াছবির গান, ক্রিকেট থেকে পাড়ার সিনেমা হলে উত্তম-সুচিত্রার লেটেস্ট ছবি, যা পড়তে পড়তে নস্ট্যালজিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন, বিশেষত ওই সময়কালে যাঁদের শৈশব, কৈশোর কেটেছে।
সেই যুগের বাঙালির জীবনযাপনের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল আড্ডা। আজকের ঝকঝকে ‘কফি শপ’ নয়, বরং পাড়ার চাকচিক্যহীন চায়ের দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডায় মজে থাকত বাঙালি। তাতে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতি, সামাজিক বিষয় থেকে রাজনীতি, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বিতর্কের ঝড় উঠতো।
ষাট-সত্তরের দশকে বাংলার অশান্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাঙালির আর্থ-সামাজিক জীবনে তার প্রভাব উঠে এসেছে বিশ্বরূপের লেখনীতে।
সিনেমা, বিনোদন আর পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা, সে সব গল্পকথাও দুই মলাটের ছোট্ট পরিসরে বন্দি করেছেন তিনি।
বিশ্বরূপবাবু বড় হয়েছেন জেলা শহর কৃষ্ণনগরে। আর কলেজ জীবন কেটেছে কলকাতা। আর কর্মজীবনও এই মহানগরীতে। তাঁর এই বইটি এক অর্থে ব্যতিক্রমীও বটে। এ ধরনের ভাবনার আঙ্গিকে বই বাংলায় খুব একটা লেখা হয়েছে বলে মনে হয় না।
সেইসব ফেলে আসা দিনযাপন
প্রকাশক- অক্ষর প্রকাশনী। মূল্য- ৮০ টাকা।
পাওয়া যাচ্ছে অক্ষর প্রকাশনী, ১৮ এ, টেমার লেন, কলকাতা ৭০০০০৯ এবং দেজ পাবলিশিং-এ।
আগ্রহীরা নারায়ণচন্দ্র ঘোষের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন- 98748-43867