হোমক্রাইম রিপোর্টারCRIME REPORTER : আইনজীবী থেকে অন্ধকার জগতের বেতাজ বাদশা

CRIME REPORTER : আইনজীবী থেকে অন্ধকার জগতের বেতাজ বাদশা

CRIME REPORTER : আইনজীবী থেকে অন্ধকার জগতের বেতাজ বাদশা

(CRIME REPORTER: এই পর্বে শোনানো হবে নানান অপরাধ কাহিনী। বিভিন্ন রহস্যজনক ঘটনার নেপথ্য কাহিনী। বিখ্যাত গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর তদন্তের রোমহর্ষক গল্প। বিভিন্ন দেশের গুপ্তচর সংস্থাগুলোর গোপনে খবর সংগ্রহের গল্প ,আড্ডার মত করে উঠে আসবে বিশিষ্ট সাংবাদিক হীরক কর -এর কলমে।)

হীরক কর : বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল খুনের তদন্তভার ইতিমধ্যে সিআইডি-র হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ৩ জনকে আটক করে জেরা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তদন্তের জাল অনেকটা গুটিয়ে এসছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

আজ সকালেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে তলব করেন রাজ্যপাল জগদীশ ধনকড়। অনেক টানাপোড়েনের পর বিকেল তিনটে নাগাদ তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। বিজেপি অবশ্য সিবিআই তদন্তের দাবিতে অনড় রয়েছে। নবান্ন থেকে নির্দেশ আসতেই এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা। বেশ কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করেন তাঁরা। এর পর যান টিটাগড় থানায়। 

প্রকাশ্যে বিজেপি নেতা খুনে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায়। ব্যারাকপুর জুড়ে চলে বনধ। রাস্তা অবরোধ করতে আগুন জ্বালিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা। ক্ষোভের আঁচ টের পাওয়া গিয়েছে কলকাতায় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের সামনেও। সেখানেও ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। 

বিজেপির দাবি, পুলিশ ও তৃণমূল হাত মিলিয়ে খুন করেছে মণীশ শুক্লকে। যদিও এই তত্ত্ব মানতে নারাজ পুলিশ। সোমবার রাজ্য পুলিশের তরফে টুইট করে জানানো হয়, টিটাগড়ে এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে খুন ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ ছিল। কী কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 

মণীশের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে উঠেছে। বিজেপির বক্তব্য, তৃণমূল মেরেছে মণীশকে। তৃণমূলের বক্তব্য, বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের ফল মণীশ খুন। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, মণীশ তৃণমূলে থাকার সময়ে বিজেপি-সহ বিরোধীরা বলত, তিনি সমাজবিরোধীদের পাণ্ডা। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তৃণমূল বলত, মণীশ অ্যান্টিসোশ্যাল এলিমেন্ট! পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, মণীশ কি ছিলেন তা সবাই জানত ! রাজনৈতিক দলগুলো শুধু তাঁকে ব্যবহার করে গিয়েছে।

পেশায় আইনজীবী মণীশ শুক্ল ব্যারাকপুর এলাকায় নিজেকে সমাজসেবী হিসেবে পরিচয় দিতেই পছন্দ করতেন। গত লোকসভা ভোটের পর তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। এর আগেও দু’দুবার তাঁর ওপর গুলি চালানো হয়েছে। কিন্তু দেহরক্ষীদের তৎপরতায় বেঁচে যান তিনি। কিন্তু এবার আর ভাগ্য সহায় হয়নি। আততায়ীদের নিশানা ভ্রষ্ট হয়নি ।

ঝকঝকে চেহারার মণীশ কিশোর বয়স থেকেই বেপরোয়া স্বভাবের ছিলেন। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে রাজনৈতিক কিংবা গোষ্ঠী সংঘর্ষ প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। বিভিন্ন সময়ে একাধিক সংঘর্ষে জড়িয়েছেন মণীশ।

সাল ২০০০। সেসময় টিটাগড় বাজারের একটি সংঘর্ষের ঘটনায় প্রথম শিরোনামে আসে মণীশের নাম। সে সময়ের শাসকদল সিপিএমের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন। অচিরেই ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তড়িৎবরণ তোপদারের ডান হাত হয়ে ওঠেন।

তবে সিপিএমের সঙ্গে তাঁর এই বেশিদিন টেকেনি। গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। এর মধ্যে আইনের ডিগ্রিও পেয়ে যান। সিপিএম ছেড়ে কিছুদিনের জন্য কংগ্রেসে করেছিলেন। তারপর যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে।

সময়ের হিসেবে প্রায় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এলাকায় তাঁর পরিচয় ছিল তৃণমূল নেতা হিসেবেই। তাঁর বিরুদ্ধে উঠতে থাকে একের পর এক অভিযোগ।
উত্তর ২৪ পরগনা তথা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের একাধিক অটো রুটের অলিখিত আরটিও ছিলেন এই দাপুটে নেতা। তাঁর অনুমতি ছাড়া অটোর রুট পারমিট মিলত না। খুন, তোলাবাজি, ডাকাতির পুলিশের খাতায় তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অপরাধের তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। অভিযোগ ছিল মণীশের বিরুদ্ধেও।

টিটাগড় থেকে চিড়িয়ামোড়– এই জনপদের অলিখিত সম্রাট ছিলেন তিনি। নিজেকে সমাজসেবী পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন। সেই সূত্রে ক্লাবে ক্লাবে অ্যাম্বুলেন্স দান থেকে রক্তদান শিবির সবই একক উদ্যোগে। স্থানীয় বিধায়ক শীলভদ্র দত্তের ডান বলে পরিচিত ছিলেন। আর সাংসদ অর্জুন সিং তাঁকে ভাই বলে ডাকতেন।

অর্জুন সাংসদ হওয়ার পর গত বছরের জুন মাসে তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মণীশ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর টিটাগড়ে রীতিমতো উৎসব হয়েছিল। ব্যান্ড-পার্টি, আতসবাজি, বিরিয়ানি, সব মিলিয়ে একরাতেই খরচ হয়েছিল প্রায় কোটি টাকা। ততদিনে আইনজীবী থেকে ব্যারাকপুরের অন্ধকার জগতের বেতাজ বাদশা হয়ে উঠেছেন মণীশ শুক্ল।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img