শ্যামল সান্যাল : ওই নারী তাকিয়ে আছে। মুখে হাসি। অসাধারণ সুন্দরী। ওর সামনে দাঁড়িয়ে কত মানুষ সব ভুলেছে। দিন রাত বিভোর হয়ে চেয়ে থেকেছে ওর মুখের দিকে।
লক্ষ লক্ষ কবিতা গল্প লেখা হচ্ছে শুধুমাত্র ওকে নিয়ে। সারা দুনিয়া ফিদা ওর জন্য।
কিন্তু সাড়া মেলেনি। ঠোঁট তার হাসি নিয়ে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। চোখ তার বিদিশার নিশা।
প্যারিসের লুভর মিউজিয়াম মোনালিসার ঠিকানা। সে ওখানে কোটি কোটি পুরুষের সামনে চুপ করে আছে, কত প্রেম নিবেদিত হল তা সে জানে। কিন্তু ওর হৃদয় কেউ কি জিতে নিতে পেরেছে? না তো। মোনালিসা কাউকে মন দিয়ে ফেলেনি। জিততে পারেনি একজন প্রেমিকও। সকলে শুধুই ফিরে ফিরে আসে, আবার বারে বারে।
ওই সুন্দরী দ্য ভিঞ্চির স্মৃতি মেখে অপেক্ষা করে উপেক্ষা করে প্রেমিকদের। যেন বলে, তুমি এসো, আমার হাসি মুখ দেখে পাগল হয়ে ফিরে যাও, এইটুকুই তোমাদের প্রাপ্তি। এর বেশি নয়।
প্যারিসের ওই বিশাল শিল্পকলার ঐতিহাসিক মিউজিয়ামে ঢুকেই এই কলমচির প্রথম খোঁজ ছিল, মোনালিসা কোথায়?
সেদিন পুরো সময় কেটেছিল ওর সামনে নতজানু হয়ে। আঁশ আর মেটে না। ওর চোখ মুখ হাসি মন্ত্রমুগ্ধের জন্য যথেষ্ট। নিরাপত্তার শক্ত বেড়া ওকে ঘিরে। কাছে ঘেঁষা যাবে না। চিনে মাও জে দঙের মমি করা দেহ দেখতে গিয়েও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওখানে থাকা যায়। সেনার কড়া চোখের চাহনি বলে দেয়, চলে যাও বাপু।
তবে এখন লুভর মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের মনে একটু দয়া হয়েছে। তাঁরা দেখছেন, রোজ কোটি কোটি মানুষ ওই নারীর যত কাছে যেতে পারেন যাচ্ছেন। তারপরে তুলছেন সেলফি। তাদের রুখে দিতে গেলে ব্যাপক হৈ হৈ।
এই অবস্থার হাত থেকে উদ্ধার পেতে তাঁরা দর্শকদের সঙ্গে মোনালিসার ঘনিষ্ঠ হবার ব্যবস্থা করছেন। দ্য ভিঞ্চি 1519 সালে মারা যান। অক্টোবর মাসে মোনালিসার চিত্রকর ওই শিল্পীর মৃত্যু। সেই দিনের স্মরণে তাঁরা মোনালিসাকে ঘিরে ভার্চুয়াল টুরের আয়োজন করেছেন।
আধুনিক বিজ্ঞানকে এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রযুক্তির সাহায্যে প্রেমিকরা এখন ওই সুন্দরী নারীর মুখোমুখি বসে কথাও বলতে পারবেন। ওই নারীকে পাগল প্রেমিক বলতে পারবেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ…
সুন্দরীরা উত্তর দেয় ইঙ্গিতে। মোনালিসার ইঙ্গিত নিয়েই প্রেমিক ফিরে যাবেন। এই কলকাতাতেও তো ওদের টুকরো হাসি, চাহনির অর্থ কত প্রেমিক বুঝতে না পেরে বিবাগী হয়ে যায়।