বিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায়
এক অপূর্ব ইতিহাসের গল্প। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের অন্ত্যলীলার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে শ্যামপুকুর বাটী। ১৮৮৫ সালের ২ অক্টোবর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ৫৫ নম্বর শ্যামপুকুর স্ট্রিটের ভাড়াবাড়িতে এসে উঠেছিলেন। দিনটি ছিল শুক্রবার। তখন এই বাড়ির মালিক ছিলেন গোকুল ভট্টাচার্য। মোট ৭০ দিন এই বাড়িতে ছিলেন ঠাকুর। ঐ বছরই ১১ ডিসেম্বর শ্যামপুকুর বাটীর লীলাবিলাসের আসর ভেঙে দিয়ে ঠাকুর কাশীপুর উদ্যান বাটীতে গিয়ে ওঠেন।
সেদিনটিও ছিল শুক্রবার। আলাদা একটি ঘোড়ার গাড়িতে শ্রী শ্রীমাতাঠাকুরানী ঠাকুরকে অনুসরণ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, শ্যামপুকুর বাটীতে আসার আগে ঠাকুর বাগবাজারে ৫৭ নম্বর রামকান্ত বসু স্ট্রিট এ ভক্ত বলরাম বসু মহাশয়ের বাড়িতে সাতদিন ছিলেন। শ্রীমৎ স্বামী প্রভানন্দ মহারাজ তাঁর লেখা ‘ শ্রীরামকৃষ্ণের অন্ত্যলীলা’ গ্রন্থে ভারি সুন্দরভাবে শ্যামপুকুর বাটীতে ঠাকুরের ৭০ দিনের অবস্থানের চিত্রটি বর্ণনা করেছেন। এই বাড়িতে নরেন্দ্রনাথ সহ ঠাকুরের প্রিয় পার্ষদ ও ভক্তরা ঠাকুরের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন।
ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার চিকিৎসা করতে এসেছেন। এই বাড়িতেই ঠাকুরের সঙ্গে ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ নটি বিনোদিনীর। কিন্তু কালের নিষ্ঠুর নিয়মে ঠাকুরের পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত এই বাড়ির বারে বারে হাতবদল হয়, ক্রমশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। ১৯৭৬ সাল থেকে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা শ্রীম বা মাস্টারমশাই এর প্রপৌত্র প্রয়াত গৌতম গুপ্ত মহাশয় ও নবগঠিত শ্রীরামকৃষ্ণ স্মরণ সংঘের সদস্যদের হাত ধরে।
বছরের পর বছর ধরে তাঁদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাড়িটি পুনরুদ্ধার হয়। এখন শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অন্যতম একটি শাখা কেন্দ্র ঠাকুর ও মায়ের পুণ্যস্মৃতিময় এই বাড়িটি। শ্রীরামকৃষ্ণ-ভক্ত ও অনুরাগীদের কাছে পবিত্র তীর্থস্থানও বটে। শ্যামপুকুর বাটী র পুনরুদ্ধারের চমকপ্রদ ইতিহাস সম্বলিত এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৫ সালে প্রয়াত গৌতম গুপ্ত মহাশয়ের ঐকান্তিক আগ্রহ ও আশীর্বাদ এ। দেশ-বিদেশে ভক্ত ও অনুরাগীদের কাছে আদৃত হয়েছে এই ছোট্ট পুস্তিকাটি।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)