অভিজিৎ হাজরা : সাপ সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলির মধ্যে একটি হল, কার্বলিক অ্যাসিডের (Carbolic Acid) গন্ধে বুঝি সাপের উপদ্রব হয় না। সত্যিটা জেনে হাসিই পাবে। যে প্রাণির ঘ্রাণশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ, প্রায় নেই বললেই চলে, তার উপর কার্বলিক অ্যাসিডের গন্ধ প্রভাব ফেলবে কী করে? খুব বিশদে না গিয়েও মোটামুটিভাবে বলা চলে, সাপের নাসারন্ধ্র থাকা সত্ত্বেও এরা গন্ধ ঘ্রাণ নিতে পারে না। কারণ, সাপের নাসারন্ধ্রের সঙ্গে মস্তিষ্কের সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই।
তাই সাপের গাঢ় ঘ্রাণশক্তি নেই বললেই চলে। এদের জিভ কিছুটা কেমিক্যাল সেন্সিটিভ হওয়ায় সামান্যতম গন্ধ অনুভব করতে পারলেও হাসনুহানা ফুল কিংবা কার্বলিক অ্যাসিডের গন্ধ পাবে, তা রীতিমত অসম্ভব। বরং ব্যাপারটা কিছুটা ঘুরিয়ে নাক ধরার মতো।
সাপের প্রধান খাদ্য হল ইঁদুর, ব্যাঙ প্রভৃতি। তাই যেখানে এদের উপদ্রব বেশি, সেখানে সাপের আনাগোনা বেশি। কার্বলিক অ্যাসিডের নিজস্ব একটা উৎকট গন্ধ আছে। সেই ঝাঁঝালো গন্ধ ইঁদুর বা ব্যাঙের উপর কিছুটা প্রভাব ফেলে। তাই তারা কার্বলিক অ্যাসিডের গন্ধ এড়িয়ে চলে। এদের অবর্তমানে সাপের আসার সম্ভাবনা কমে যায়। কারণ, শিকার যেখানে, সাপও সেখানে।
দ্বিতীয় আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, এই রাসায়নিক যৌগটি ততক্ষণ গন্ধ ধরে রাখতে পারে, যতক্ষণ না বায়ুর সংস্পর্শে আসছে। কিন্তু আমরা তো কার্বলিক অ্যাসিড কিনে বোতলের মুখে ছিদ্র করে অথবা কোনও ছোট পাত্রে তুলো কিংবা কাপড়ের ছোট ছোট টুকরা রেখে তাতে কার্বলিক অ্যাসিড দিয়ে ভিজিয়ে রেখে দিই।
এর ফলে ফেনল বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে বাদামী বর্ণের প্যারাবেঞ্জোকুইননে পরিণত হয় এবং এই প্যারাবেঞ্জোকুইনন আবার দুইটি ফেনল মলিকিউলের সাথে হাইড্রোজেন বন্ড করে গোলাপী বর্ণের ফেনোকুইনন সৃষ্টি করে। এই পদার্থের মধ্যে ফেনলের কোন ধর্ম অবশিষ্ট থাকে না, এমনকি গন্ধ প্রায় উধাও হয়ে যায়।
ভেবে দেখুন টাটকা অবস্থায় যে গন্ধ সাপের উপর কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারে না, সেই গন্ধ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হওয়ার পরেও কি সাপ তা পেতে পারে? ব্যাপারটা পুরোপুরি বিজ্ঞান বিরুদ্ধ। তাই কার্বলিক অ্যাসিড নতুন হোক আর পুরাতন হোক, এর সাহায্যে কোনওভাবেই সাপ তাড়ানো যাবে না।
(আপনার বাড়িতে কার্বলিক অ্যাসিডের বোতল থাকলে লক্ষ্য করবেন, কেনার সময় দেখতে ছিল স্বচ্ছ ক্রিস্টাল। কিন্তু একমাস পর সেটা খানিক বাদামী খানিক কালচে গোলাপী হয়ে যায়।)
