হোমঅন্যান্যস্বামী শিবময়ানন্দ : আপাত গাম্ভীর্যের আড়ালে ছিলেন এক অন্য মানুষ

স্বামী শিবময়ানন্দ : আপাত গাম্ভীর্যের আড়ালে ছিলেন এক অন্য মানুষ

স্বামী শিবময়ানন্দ : আপাত গাম্ভীর্যের আড়ালে ছিলেন এক অন্য মানুষ

(করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের (Ramkrishna Math And Mission) ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামী শিবময়ানন্দ (swami shivamayananda)। তিনি রণেন মহারাজ (Ranen Maharaj) নামেও পরিচিত ছিলেন। শুক্রবার রাত 9. 10 মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। ১৯৫৯ সাল থেকে বেলুড় মঠের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। প্রয়াত মহারাজের স্মৃতিচারণায় বিশিষ্ট সাংবাদিক তরুণ গোস্বামী।)

৩৫ বছর আগে মহারাজের সাথে পরিচয়। অর্থাৎ সাড়ে তিন দশক। এই গম্ভীর প্রকৃতির মানুষটিকে ছাত্র জীবনে ভয় পেতাম। কিন্তু বয়স যত বেড়েছে, দেখলাম ওই গাম্ভীর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছেন একজন মজার মানুষ। কথা বলতেন কেটে কেটে। খুব precise and to the point। একসময় মঠের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালাতেন। সব খুঁটিনাটি খবর থাকত মহারাজের নখদর্পণে।

মহারাজকে ঘিরে রহড়া মিশনে গন্ডগোল হয়েছিল। সিপিএম তখন মনে করত মিশনের স্কুল, কলেজে ওদের আধিপত্য স্থাপন করতে হবে। মধ্য মেধার চাষ করতে হবে। মহারাজের সাথে চূড়ান্ত দুর্ব্যবহার শুরু হয়। পরে মহারাজের গায়ে গরম চা ঢেলে দেওয়া হয়। যেদিন এই ঘটনা ঘটে তার পরের দিন সাংবাদিক প্রণবেশ চক্রবর্তীর সঙ্গে রহড়ায় গিয়েছিলাম। মহারাজের কথা শুনে কেঁদে ফেলেছিলাম।

আমারও তখন কম বয়েস। মহারাজ বলেছিলেন, আমরা তো কবে ঘর ছেড়ে এসেছি, এই সব স্বামীজির কাজ। বলেছিলেন, The Bible-এ আছে, প্রভু যীশু বলেছেন, “Lord they do not know what they do forgive them”. খবরের কাগজে কাজ করার পরে মহারাজের সাথে অন্যরকম সম্পর্ক হয়। একসাথে বহুবার বহু জায়গায় গেছি বক্তৃতা করতে।

মহারাজ যখন স্বামীজির বাড়িতে ছিলেন প্রায়ই যেতাম। দুটো কুকুর ছিল লালু আর ভুলু। সন্ধেবেলা দুটোতে মিলে খুব খেলতো। পরে কামারপুকুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখি খুব মোটা হয়ে গেছে। মহারাজকে বলতেই বললেন, শুধু খাবে, exercise করবে না, কি হয়েছে চেহারা দুটো!

স্বামী প্রভানন্দজীর কাছে এক সময় প্রতি শনিবার যেতাম, মহারাজ গল্প করতে আসতেন। একদিন আমাকে দেখিয়ে প্রভানন্দজিকে বললেন, এই বাচ্চা ছেলেটি অদ্ভূত, সাধুর কষ্টে ওকে কাঁদতে দেখেছি। এ তো rare phenomenon.

মহারাজের কাছে স্বামী লোকেশ্বরানন্দজির গল্প শুনতাম। বলতেন বিড়ি বা সিগারেট খেয়ে কানাই মহারারাজের কাছে যাবার আগে মুখটা ধুয়ে যেতাম, যাতে উনি গন্ধ না পান। বলতেন, ওই হৃদয় আর পাওয়া যাবে না।

পুড়বে সাধু, উড়বে ছাই, তখন সাধুর গুণ গাই। আজ মহারাজ অনন্ত পথে যাত্রা করেছেন, আমাদের সামনে রেখে গেলেন এক দিব্য জীবন আর সাথে একটি শিক্ষা prioritize your needs, be sincere and work for Swamiji. প্রণাম মহারাজ।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img