কমল ভট্টাচার্য
(শুরু হল প্রবীণ সাংবাদিক কমল ভট্টাচার্যের নতুন কলম। ফেলে আসা জীবনের বহু ঘটনা, তথ্য, না জানা কথার পাশাপাশি ঠিক এই সময়ের কথাও তিনি তুলে ধরেছেন অনবদ্য ভঙ্গিতে। পাঠকদের অনুরোধ, তাঁরা এই কলমটি পড়ুন, অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করুন ও খোলাখুলি মন্তব্য করুন।)
মমতা সেদিনও ছিলেন ক্রাউডপুলার, আজও তিনি হ্যামলিনের বাঁশিওলার মত যেখানেই যান, মানুষ সেখানে চলে আসেন। ভিড় হয় তাঁকে ঘিরে। তাঁর জনসভায় মানুষের ভিড় উপছে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী বা তৃণমূল সুপ্রিমো বলেই কি? আমার কেমন যেন মনে হয় উনি একজন ক্রাউড পুলার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে চুম্বকের মত জনসাধারণকে টানটান করে টেনে নেন। এটা একটা বিরল ব্যক্তিত্ব। এই ক্ষমতা খুবই কম নেতারই থাকে।এই ক্ষমতার কোনও ব্যাখ্যা হয় কি না, আমার জানা নেই অন্তত।
ওঁর এই ক্ষমতার পরিচয় পেয়েছিলাম আজ থেকে বহু বছর আগে। সেটা ৯০-এর দশকের ঘটনা।
ঘটনাস্থল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আওয়ামী লিগের আমন্ত্রণে উনি গিয়েছিলেন। আমি আর বন্ধু সাংবাদিক প্রবীর ঘোষালও ছিলাম আমন্ত্রিত। প্রবীর এখন অবশ্য তৃণমূলের নেতা, এমএলএ।
আমরা ছিলাম শেরাটন হোটেলে। মমতাও ছিলেন ওই হোটেলেই। আমরা ওঁর ঘরের কয়েকটা ঘর পরেই ছিলাম। আমরা দুজনে আড্ডায় মেতেছিলাম বেশ জমিয়ে। দুজনের কেউই সিগারেট বা পানীয়তে আগ্রহী ছিলাম না, এখনও তাই।
এরই মধ্যে মমতা খবর পাঠালেন ওঁর ঘরে চা খাবার জন্য। আমরা গিয়ে চা পানের সময় বললেন, আমি একটু ঘুরতে যাবো। যাবেন না কি ? আমরা তো খুবই খুশি হয়ে বললাম, চলুন না ঘোরা যাক। উনি একটু হেসে বললেন, আমি কিন্তু গাড়ি নেব না। রিকশায় যাবো। আমরা বললাম, বেশ তো। রিকশা করেই বেশ ঘোরা যাবে। রাস্তায় বেরিয়ে উনি একটা রিকশায় উঠলেন। আমরা দুজনে আর একটা রিকশায় সওয়ারি হলাম।
রিকশায় মমতাকে দেখে মানুষের সে কি উচ্ছ্বাস, ভিড় রাস্তায়। সবাই হাত তুলে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। মমতা ব্যানার্জির নামে স্লোগান দিচ্ছেন। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। সাধারণ সেই সুতির শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চপ্পল। আজকের মতই । সেদিন উনি এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন কেউ ভাবেননি। তিনি ছিলেন অগ্নিকন্যা, বিদ্রোহী। আন্দোলনের আরেক নাম।