হোমভ্রমণঅন্য মায়াপুরের খোঁজে

অন্য মায়াপুরের খোঁজে

অন্য মায়াপুরের খোঁজে

দেবস্মিতা নাগ: মায়াপুর ও নবদ্বীপ গঙ্গার দুই পাড়ে পরস্পরমুখী দুই শহর,মাঝখানে মিলিত হয়েছে ভাগীরথীর লাল জলের সঙ্গে জলঙ্গীর সবুজ। সেই দৃশ্য নদী পেরোনোর সময় স্পষ্ট দেখা যায়।

নবদ্বীপ ধাম বা বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে নেমে টোটো চড়ে বড়াল ঘাট, তারপরে গঙ্গা পেরোলেই ইস্কনের গগনচুম্বী মন্দির, এটুকু তো দেশ দেশান্তরের অনেকেই জানেন। কিন্তু আর কী কী আছে মায়াপুরে সেটা কিন্তু অনেকেই জানেন না। অথবা youtube-এর দৌলতে জেনে থাকলেও সে তথ্য বিস্তারিত জানেন না।

শ্রীচৈতন্য পূর্বকালে মায়াপুর ছিল মিঞা পুর। শ্রীচৈতন্যের শিষ্য চাঁদ গাজীর সমাধিস্থল, বিশেষ দর্শনীয় স্থান মায়াপুর। সেখানে এক সুপ্রাচীন চাঁপা গাছ আছে। আর সেখান থেকে কিছু দূরেই রয়েছে শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান ও তাঁর মাসির বাড়ি।

যদিও তাঁর জন্মস্থান নবদ্বীপ শহরের মধ্যে থাকা প্রাচীন মায়াপুরে না গঙ্গার অন্য পারে মায়াপুরে, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এছাড়াও রয়েছে ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মঠ মন্দির। জনসমাগম কম হওয়া সে সব মন্দিরের পরিবেশ ইস্কনের তুলনায় অনেক বেশি শান্ত সমাহিত। সর্বত্রই রয়েছে দুপুরে প্রসাদ গ্রহণের ব্যবস্থা।

কিন্তু ধর্মস্থান ছাড়াও মায়াপুরের একটি ঐতিহাসিক মূল্য আছে। এই অঞ্চলের আবিষ্কৃত হয়েছে সেন বংশের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের ঐতিহাসিক নিদর্শন।বল্লাল সেনের প্রাসাদ ও মন্দিরের কিছুটা অংশ গঙ্গার কোল ঘেঁষে খনন করে উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাসাদটি সাত তলা, যার উপরের দুটি তলাই উদ্ধার করা গেছে আশির দশকে। এর পর আইনি জটিলতায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর স্থানীয় নাম বল্লাল ঢিপি। এই প্রাসাদের চূড়ায় খোদিত আছে একটি মহিষের মুখ,সম্ভবত এর মুখ দিয়ে জলের স্রোত নির্গত হত এবং সেই জলে ধুয়ে যেত বলির রক্ত।

খননের ফলের প্রাপ্ত সমস্ত মূর্তি,মুদ্রা ও অন্যান্য যাবতীয় নিদর্শন নিয়ে যাওয়া হয়েছে সংগ্রহশালায়।ধ্বংসাবশেষের চতুর্দিকে উঁচু হয়ে থাকা স্তুপাকার অঞ্চল অসম্পূর্ণ আবিষ্কারের ফলে জেগে ওঠা এক অমীমাংসিত কৌতূহলকে উস্কে দেয়।

এই স্তুপের উপর উঠে সন্ধ্যার লাল গঙ্গার দিকে চাইলে, সেই দৃষ্টি পর্যটককে নিয়ে যেতে পারে সুদূর অতীতে, ফেলে আসা কোনও পড়ন্ত বিকেলের কোনও নগরের ধ্বংসের শেষ দিনে। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস ইন্দিরার শুরুতেই বল্লাল সেনের রাজত্বকালের শেষের সে দিনের বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও ধ্বংসলীলার যে বর্ণনা রয়েছে, এই ভগ্নাবশেষের প্রত্যেক ইটে সেই ছবি খুঁজে পাওয়া যাবে। এই স্থান ভ্রমণ না করলে মায়াপুর ভ্রমণ অসম্পূর্ণ।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img