হোমআন্তর্জাতিকএ পরবাসে বসে রই, দ্যাশ ডাকে

এ পরবাসে বসে রই, দ্যাশ ডাকে

এ পরবাসে বসে রই, দ্যাশ ডাকে

tirthankarতীর্থঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, লন্ডন

(লেখক কলকাতার মানুষ। পেশাগত কাজের সূত্রে দুই দশক ধরে লন্ডনের বাসিন্দা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তাঁঁএই স্মৃতি রোমন্থন)
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর। বাবা বেঁচে থাকলে বলতেন পূর্ববঙ্গ। বন্ধু-সাবেক সহকর্মী ঈশানীর(ঈশানী দত্ত রায়) বাবার কাছে East Pakistan। “বাংলাদেশ আমার দেশ নয়। আমার দেশ পূর্ব পাকিস্তান।” একবার বলেছিলেন মেসোমশাই।

আমার ঠাকুমার কাছে “দ্যাশ”। এক এবং অদ্বিতীয় আশ্রয়। যে কোনো আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ reference point।

বিলেতে আসার আগে “দেশ” শব্দটার গুরুত্ব সেভাবে অনুধাবন করিনি কখনো। ঠাকুমা যেমন জন্মভিটা ছেড়ে চলে আসার পরেও আমৃত্যু দেশছাড়া হতে পারেননি, আমাদেরও প্রায় সেই দশা।

আমার বাবার মামাবাড়ি ছিলো ফরিদপুরে। ঠাকুরদার বরিশালের উত্তর শাহবাজপুরে। পরে কাজের সূত্রে ভোলায় থাকতেন ঠাকুরদা। বীণাপাণি গার্লস হাইস্কুলের অংকের শিক্ষক। মানু মাস্টার।

বাংলাদেশের রাজনীতিক এবং ভোলার সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের কাছে শুনেছি স্কুল এখন কলেজ হয়েছে। একবার ঘুরে আসতে বলেছিলেন তোফায়েল সাহেব। ঠাকুমার দ্যাশ এখনো দেখা হয়নি। আমার শ্বশুরমশাই ঢাকায় একবার নিজের দেশের মাটি স্পর্শ করতে চান।

বাবার কাছে শুনেছি, ঈশানীর ঠাকুরদা সেই আমলে উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক ছিলেন। সম্ভবত আবগারি দপ্তরে। বাবার হাতেখড়ির দিন, বাবার ঠাকুমা ঈশানীর ঠাকুরদার কলম চুরি করে এনেছিলেন। এই আশায় যে ঐ কলম দিয়ে হাতেখড়ি হলে নাতি উচ্চশিক্ষিত হবে।

মায়েদের বাড়ি ছিল ঢাকার অদূরে। বিক্রমপুর তখন ঢাকারই অংশ। বজ্রযোগিনী অতীশ দীপঙ্করেরও গ্রাম। যুগান্তরের বিখ্যাত বার্তা সম্পাদক দক্ষিণারঞ্জন বসুও ঐ গ্রামের। ওঁর লেখা “ফেলে আসা গ্রাম” সিরিজ সেই আমলে পাঠকমহলে দাগ কেটেছিল। ওঁর ছেলে কল্যাণদা যুগান্তরে ছিলেন। আর কুণালদা FT-র হয়ে কলকাতায়।

আমার কাছে বাংলাদেশ বলতে আনিসুজ্জামান। রাতবিরেতে ফোন করলেও বিরক্ত হতেন না। বা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সংযত কিন্তু তীক্ষ্ণ। বা সাংবাদিক আতাউস সামাদ। অনন্ত প্রাণশক্তির আধার অথচ নিরভিমানী।

আরো আছেন। অধ্যাপক সৈয়দ মানজারুল ইসলাম এবং সাংবাদিক মঞ্জু ভাই, ফরিদ ভাই, সাবু ভাই।

এবং এক এবং অদ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো framework-এই যাকে ধরা সম্ভব নয়। উনি নিউ ইয়র্ক-এ রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাষণ দিতে গিয়ে হোটেলে মোরগ পোলাও রান্না করে নিজের ছেলে এবং নিরাপত্তারক্ষীদের দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়াতে পারেন।

আমার মতো এক অর্বাচীনকে সস্নেহে বলতে পারেন, “তুমি ঢাকায় আসো। আমি তোমাকে পিঠা খাওয়াব।”

তখন লন্ডনে এসেছি এক বছরও হয়নি। এক সিনিয়র সাংবাদিকের শাগরেদ হয়ে Claridges Hotel-এ গেছি। শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। আমি শুধুই সঙ্গী।

লন্ডনে এলে শেখ মুজিব ঐ হোটেলেই উঠতেন। সেই ট্র্যাডিশন জারি রেখেছেন কন্যা শেখ হাসিনাও।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img