CRIME REPORTER : এই পর্বে শোনানো হবে নানান অপরাধ কাহিনী। বিভিন্ন রহস্যজনক ঘটনার নেপথ্য কাহিনী। বিখ্যাত গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর তদন্তের রোমহর্ষক গল্প। বিভিন্ন দেশের গুপ্তচর সংস্থাগুলোর গোপনে খবর সংগ্রহের গল্প আড্ডার মত করে উঠে আসবে বিশিষ্ট সাংবাদিক হীরক কর -এর কলমে।)
হীরক কর : আয় বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার অভিযোগে তিন সাংবাদিকের বাড়িতে হানা দিল আয়কর দফতর। ইডির নামে তোলাবাজিকাণ্ডের জেরেই এই আয়কর হানা বলেই সূত্রে জানা গেছে। এই তিন সাংবাদিকদের নাম ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। সূত্রে খবর, তল্লাশি চালানো হয়েছে ভোলানাথ পাইক নামে এক প্রোমোটারের বাড়িতেও, যিনি নাকি কয়েক জন সাংবাদিককে ফ্ল্যাট গিফট করেছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা তল্লাশি চলে । তল্লাশি চালানো হয় বাইপাস সংলগ্ন একটি বিলাস বহুল ফ্ল্যাটে। আয়কর দফতরের অফিসাররা হানা দেন রুবির কাছে একটি বাড়িতে। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও।
এদের নিয়ে ক্রাইম রিপোর্টার পর্ব-19, 21 এবং পর্ব 24-এ বিস্তারিত লিখেছিলাম। ঘটনা হল সংবাদ মাধ্যমে লেখা হোক আর নাই হোক, রাজ্যের প্রভাবশালী মহল,ক্ষমতাশালীরা এই দুর্নীতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের সম্পর্কে সবই জানেন। জানে সংবাদ মাধ্যম এবং এলিট সমাজ। তাই সাধারণ মানুষ জানলেন কি জানলেন না, তাতে কিছু এসে যায় না ।
যাই হোক, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অর্থাৎ ইডির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর নির্মল কুমার মোসা, বিধাননগর উত্তর থানায় একটি FIR করেন (FIR number 140/20)। ওই এফআইআরে বাংলার একাধিক টিভি নিউজ চ্যানেলের কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তোলাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়। ইডির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে ডিসি ডিডি বিধাননগর।
বিধাননগর পুলিশ চার সাংবাদিকের তোলাবাজি কাণ্ডে যুক্ত থাকার তথ্য পেয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। আর তারপরেই তাঁদের সমন পাঠিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার জেরেই এবার আসরে নামলেন আয়কর দফতরের অফিসাররা। মঙ্গলবার এই আয়কর হানায় তাদের সঙ্গে ছিল সিআরপিএফ বাহিনী।
ইডি তোলাবাজি কাণ্ডেই, গোয়েন্দা তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। সূত্রের খবর, মোট ১৭ জন ব্যবসায়ী ও নেতার কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে প্রায় ৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা তুলেছেন চার সাংবাদিক এবং এদের সঙ্গে জড়িত আরও দুই সাংবাদিক। ইডির কাছে লিখিত অভিযোগ পেয়ে; বিধাননগর ডিডি এখন তদন্ত করলেও এই ৬ জনকেই ইডির তরফেও নোটিশ পাঠানো হবে বলেই সূত্রের খবর।
ইডির ওই এফআইআরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে; অপরাধমূলক প্রতারণা (420 IPC), জালিয়াতি (468 IPC), তোলাবাজির জন্য কাগজপত্র ও ইলেক্ট্রনিক রেকর্ড ব্যবহার (471 IPC), প্রতারণার জন্য জাল সিল ও সই ব্যবহার (472 IPC), জাল ডকুমেন্ট রাখা ও ব্যবহার (474 IPC), ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (120B) ধারায় FIR দায়ের করা হয়েছে।
পুজোর আগে তিন দিন ধরে প্রায় প্রতিদিন, ৬ ঘণ্টা করে জেরা করা হয় ৩ সাংবাদিককে। এই মামলাতেই এবার আসরে নামল আয়কর দফতর। এর জেরেই তিন সাংবাদিকের বাড়িতে ইনকাম ট্যাক্সের তল্লাশি।
১৭ জন ব্যবসায়ী ও নেতার কাছ থেকে নগদ টাকা, কারোর কাছে ফ্লাট, আবার কারোর কাছ থেকে দামি গাড় উপহার পেয়েছে এই সাংবাদিকরা। আয়ের সঙ্গে এই সাংবাদিকদের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স ও সম্পত্তি; মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। কার কটা গাড়ি আছে; তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবকিছু নিয়েই তদন্ত করছে; বিধাননগর ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট। এবার তদন্তে নামল আয়কর দফতরও।
ইডি সূত্রে খবর, এই তোলাবাজি ও ভয় দেখানো সবটাই হয়েছিল ইডির ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিনটি বড় বাংলা নিউজ চ্যানেলের তিন সাংবাদিককে তিনদিন জেরা করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আয়ের চেয়ে সঙ্গতিহীন ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি ও দামি জিনিস কেনার অভিযোগ রয়েছে। সেই সব খতিয়ে দেখতেই এবার আসরে নামল আয়কর দফতর। “বাংলার সাংবাদিকতার ইতিহাসে; একটা কালো দিন”, বলছেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সাংবাদিকরা।
বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমার অফিসিয়ালি এই ব্যাপারে কিছু বলছেন না। তবে ঘনিষ্ঠদের একান্তে নাকি বলেছেন, এ বড় জটিল কেস। ফেব্রুয়ারি-মার্চ অবধি অপেক্ষা করুন অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে। কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হবে ।