হোমআন্তর্জাতিকCorona : আপাতত বিপন্ন মানুষকে বাঁচানোই ইষ্ট হোক বিশ্বের

Corona : আপাতত বিপন্ন মানুষকে বাঁচানোই ইষ্ট হোক বিশ্বের

Corona : আপাতত বিপন্ন মানুষকে বাঁচানোই ইষ্ট হোক বিশ্বের

tirthankarতীর্থঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

(অর্থনীতি ও রাজনীতির ছাত্র একদা সাংবাদিক তীর্থঙ্কর দীর্ঘ দু’ দশক লন্ডন প্রবাসী। এই পোর্টালের জন্য শুধুমাত্র তিনি কলম ধরলেন।)

ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না। টাকা ছড়ালেও তাই। কাকের মতো বিপন্ন মানুষও এখন ভাত আর টাকার জন্য হাঁ-হুতাশ করছেন। নিশ্চিন্ত-নিরাপত্তায় বসে সেই যন্ত্রণা অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

অর্থনীতির প্রাথমিক পাঠে জেনেছিলাম, Too much money chasing too few goods. মুদ্রাস্ফীতির এটাই প্রধান কারণ। পরে দেখেছি, ব্যাপারটা ঠিক ততটা সরল নয়।

পরে আবার উন্নয়নমূলক অর্থনীতির পাঠ্যবইয়ে দেখেছি, “Inflation is the engine of growth”। দাম বাড়লেই উৎপাদক উৎপাদনের এবং বিক্রেতা বিক্রির উৎসাহ পাবেন।

তার মানে কি দাম কমার থেকে দাম বাড়া ভালো? এই ব্যাপারটাও ঠিক ততটা সরল নয়। তবে deflation বা stagflation-এর তুলনায় বোধহয় inflation কিঞ্চিৎ কাম্য।

মাত্রাছাড়া মুদ্রাস্ফীতি হলে অবশ্য বস্তায় করে টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে থলিতে ভরে বাজার করে ফিরতে হবে।

মহামন্দা এবং যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে এক নতুন অর্থনৈতিক দিশার সন্ধান দিয়েছিলেন মহামতি জন মেইনার্ড কেইন্স। দিয়েছিলেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় টাকা খরচের প্রস্তাব। এতে যাদের আয় হবে তারা সেই অর্থ দিয়ে জিনিসপত্র কিনলে চাহিদা বাড়বে।

এটাই কেইন্সের demand-determined model-এর ভিত্তি। বাড়তি চাহিদাই টেনে তুলবে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে। ছাদনাতলায় নববধূ যেমন বিয়ের জোড়বাঁধা বরটিকে জীবনপথে এগিয়ে নিয়ে যায়।

যুগান্তকারী এই পরিবর্তনে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল কুঁকড়ে যাওয়া দুনিয়া। টাইম থেকে ইকোনমিস্ট, সব প্রচ্ছদেই জায়গা করে নিয়েছিলেন স্বল্পকেশ, হাল্কা গোঁফওয়ালা মানুষটি। বিপরীত মেরুর মিল্টন ফ্রিডম্যান থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সকলেই একসুরে গলা মিলিয়েছিলেন, “We are all Keynesians now” স্লোগানে।

দেদার টাকা ছাপিয়ে খরচ করার বহরে একদিন মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি উঁকি দিতে শুরু করলো। সমালোচনার মুখোমুখি হলেন কেইনস। সমালোচকরা বলতে শুরু করলেন, দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রাস্ফীতির বিপদের কী হবে?

আজীবন কোনো কিছুকেই পাত্তা দেননি তিনি। রেলবোর্ডের প্রধান থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা – কোনও কিছুই চ্যালেঞ্জ মনে হয়নি তাঁর। বাসি বিছানায় বসে শেয়ারবাজারে ফাটকা খেলা আর প্রতি সন্ধ্যায় রুশ স্ত্রীকে নিয়ে মঞ্চে ব্যালে নাচ, এই দুটো কাজেই বেশি মন ছিল ওঁর।

স্বভাবতই কোনো সমালোচনাই গায়ে মাখতেন না। দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রাস্ফীতির বিপদের কী হবে? জবাবে বলেছিলেন, “In the long-run we are all dead.”

আজ কি আবার বলার সময় এসেছে – “We should be all Keynesians now”। Long run-এর কথা দীর্ঘমেয়াদে ভাবা যাবে। আপাতত বিপন্ন মানুষকে বাঁচানোই ইষ্ট হোক বিশ্বের।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img