হোমসাহিত্য-সংস্কৃতিশতরূপে মানুষ : পর্ব ২১।। ল্যাংড়া রতনের কাহিনী

শতরূপে মানুষ : পর্ব ২১।। ল্যাংড়া রতনের কাহিনী

শতরূপে মানুষ : পর্ব ২১।। ল্যাংড়া রতনের কাহিনী

Debdas Kunduদেবদাস কুণ্ডু

কতো লেখক কতো শিল্পী
এঁকেছেন মানুষের ছবি
গঙ্গা অজুর্ন বিবর
আমি দেখেছি মানুষ সুন্দর।

ল্যাংড়া রতন কে আছে?
লোকটা শুয়ে ছিল খাটিয়ায়। পরনে লুঙ্গি। গায়ে গেঞ্জি। শুয়ে শুয়ে কাগজ পড়ছিল। কাগজটা পাশে রেখে উঠে বসল। খসখসে গলায় বলল, কাকে চাইছেন?

আমি বলি, ল্যাংড়া রতনকে।
এখানে কেউ ল্যাংড়া রতন থাকে না। 
ঐ ঝুপড়ির বউটা যে এখানে দেখিয়ে দিল।
আমাকে?
হ্যাঁ। আপনাকে। 

কোন মাগি? ডেকে আনুন তো আমার কাছে। 
আমি ডেকে আনি বউটিকে। 
তুই বলেছিস আমি ল্যাংড়া রতন?
হ্যাঁ, বলেছি তো, বউটা বলল। 
আমি ল্যাংড়া রতন তোকে কে বলল?
সবাই বলে তো। 

তুই পাগলা রবির বউ না?
দেখ আমার সোয়ামিকে পাগলা বলবে না। 
পাগলকে পাগল বলবো না?
না। তুমি পাগল। তোমার গুষ্টি পাগল। 
কি বললি? এতো বড় সাহস তোর!
আমি বউটাকে ওর ঘরে ঢুকিয়ে দিলাম। 

আমার বন্ধু রজত বলল, আপনি কি ভয় পাচ্ছেন? ভাবছেন আমরা পুলিশের লোক? আমরা গাঁজা কিনতে এসেছি। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম। সে ল্যাংড়া রতনের নাম বলল। তা গাঁজা আছে?
আছে। ক’প্যাকেট চাই?
তিন প্যাকেট। 

লোকটা লুঙ্গি তুলে ভিতরে আন্ডার ওয়ারের পকেট থেকে বের করল তিন প্যাকেট গাঁজা।
রজত প্যাকেটগুলি পকেটে ভরে নিয়ে পাঁচশো টাকার একটা নোট দিল। বলল, চল।
আমি বললাম, ব্যালেন্স নিবি না? ।
কিসের ব্যালেন্স? পাঁচশো টাকাই দাম।

বলিস কি! ঐ ছোট ছোট তিন প্যাকেট পাঁচশো! 
হ্যাঁ। তুই তো খাস না। জানবি কী করে?
আমার ভাই সিগারেটই ভালো। 

একটা চায়ের দোকানে বসে চা খেয়ে সিগারেট টানছিলাম। হঠাৎ দেখি সেই লোকটা রাস্তা পার হচ্ছে। আমি অবাক। লোকটা তো ল্যাংড়া নয়। তাই কি অস্বীকার করছিল?

আমি জিজ্ঞেস করি, ঐ লোকটার নাম কি ল্যাংড়া রতন? 
দোকানি বলে, না।
তাজ্জব ব্যাপার!
ঐ রবির বউ যে বলল, উনি ল্যাংড়া রতন। 

দোকানি বলে, ল্যাংড়া রতন ওনার ভাইয়ের নাম। সে গাঁজা বেচতো। পুলিশ ধরেছিল। জেল হয়েছিল। জেলে মারা যায়। তারপর ওর দাদা গাঁজা বেচে এখন।

ওনার নাম কি?
কেউ জানে না। 
কী আশ্চর্য। পেশার কারণে একটা মানুষের আসল নাম হারিয়ে যায়?

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img