হোমUncategorizedচোখ : কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ?

চোখ : কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ?

চোখ : কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ?

ডা. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার

আমরা যা বিশ্বাস করি সেটা সবসময় সত্যি নাও হতে পারে। যুগ যুগ ধরে মানুষ চোখ সম্বন্ধে কিছু সাম্ভাব্য ঘটনাকে সত্যি বলে বিশ্বাস করে এসেছে। কিন্তু বিজ্ঞানের আলোয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলি ভ্রান্ত প্রমানিত হয়েছে।

চশমা সবসময় না পরলে চোখ আরও খারাপ হয়ে যাবে : যাদের চোখে দেখবার সমস্যা আছে, চশমা পরলে তারা ঠিক মত দেখতে পায়। কিন্তু চশমা না পরলে চোখ অতিরিক্ত খারাপ হয় না। তবে বাড়ন্ত বাচ্চাদের বেলায় ডাক্তারের নির্দেশ মত চশমা পরতেই হবে নতুবা ভবিষ্যতে দৃষ্টির সমস্যা হতে পারে।


কম আলোয় পড়াশোনা করলে চোখের পাওয়ার বেড়ে যাবে : অল্প আলোয় পড়াশোনা করলে চোখ ক্লান্ত হয়ে যাবে, দেখতেও অসুবিধা হবে। কিন্তু তার জন্য চোখের পাওয়ার বেড়ে যাবে না।

বেশি গাজর খেলে চোখ ভালো থাকবে: গাজরে ভিটামিন-A থাকে, যা চোখের পক্ষে উপকারী। কিন্তু বেশি খাওয়ার দরকার হয় না, সামান্য গাজরই যথেষ্ট।

কেবলমাত্র অসুবিধা হলেই চোখ পরীক্ষা করানো উচিত: চোখের অনেক অসুখে প্রথমে কোনও সমস্যাই থাকে না। বোঝাই যায় না যে, চোখ একটু একটু করে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য প্রতি বছরই ভালোভাবে চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।

বেশি পড়াশোনা বা চোখের কাজ করলে চোখের দৃষ্টি কমে যায় : অতিরিক্ত পড়াশোনা বা চোখের কাজ করলে চোখ ক্লান্ত হতে পারে, জলপড়া কিংবা মাথাব্যথাও হতে পারে। কিন্তু চোখের দৃষ্টি কমে যায় না।

খুব কাছের থেকে টিভি দেখলে চোখের দৃষ্টি কমে যাবে এবং চশমা পরতে হবে : বাচ্চাদের স্বভাবই কাছ থেকে টিভি দেখা। তাদের অ্যাকোমোডেশন ক্ষমতা বেশি বলে কোনও অসুবিধা হয় না। আবার চোখে মাইনাস পাওয়ার থাকলে কাছে না গেলে টিভি দেখা যায় না। সেজন্য কাছ থেকে টিভি দেখলে অবশ্যই চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করতে হবে।

ইলেকট্রিক বাল্বের আলো চোখের পক্ষে ক্ষতিকর : ভালোভাবে দেখবার জন্য পর্যাপ্ত আলোর প্রয়োজন। সেটা সূর্যের আলো, ইলেকট্রিক বাল্ব বা মোমবাতির আলো হতে পারে। তবে সাধারণ বাল্বের তুলনায় LED বাল্বের আলো চোখের পক্ষে আরামদায়ক।


চোখের ড্রপ লাগিয়ে পাওয়ার কমানো যায় : চোখে দেখতে অসুবিধা হলে, কেবলমাত্র চশমা, কন্টাক্ট লেন্স বা ল্যাসিক সার্জারিই (১৮ বছর বয়সের পরে) একমাত্র চিকিৎসা। আগে ধারণা ছিল, আইড্রপে কোনও কাজ হয় না। কিন্তু বর্তমানে আবিষ্কৃত বিশেষ আইড্রপ দিয়ে বাড়ন্ত বাচ্চাদের চোখের পাওয়ার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।


চোখের ব্যায়ামের সাহায্যে চশমার পাওয়ার দূর করা সম্ভব: অনেকেই দাবি করে থাকেন নিয়মিত চোখের ব্যায়ামের সাহায্যে চশমার পাওয়ার (এমনকি খুব হাই-পাওয়ার) একেবারে দূর করা যায়। বহু মানুষ প্রলুব্ধ হয়ে দিনের পর দিন যথেষ্ট অর্থব্যয়ও করেন। চোখের ব্যায়াম অবশ্যই উপকারী। এতে চোখের মাংশপেশী সবল ও মজবুত হয়। দৃষ্টিক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু চশমার পাওয়ার হ্রাস পায় কিনা, সেটা এখনও বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃত নয়।

বেশিক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করলে চোখ খারাপ হবেই : কম্পিউটারে কাজ করলে বা ভিডিও মনিটারে বেশিক্ষণ চোখ রাখলে Dry Eye Syndrome বা চোখের অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে। কিন্তু চোখ খারাপ হয় না, চোখের পাওয়ারও বেড়ে যায় না।

মরণোত্তর চোখ দান করলে পরের জন্মে অন্ধ হয়ে জন্মাতে হবে: মৃত্যুর পরে চোখ দান করা একটি মহৎ কাজ। এর ফলে বহু অন্ধ মানুষ নতুন করে দৃষ্টি ফিরে পান। পরের জন্মে অন্ধ হয়ে জন্মানো ধারণাটা নিছকই অন্ধ বিশ্বাস।

অন্ধ লোকের চোখ ট্রান্সপ্লান্ট করা সম্ভব : নানা কারণে কর্নিয়া অস্বচ্ছ হয়ে গেলে, দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। কর্নিয়া ট্রান্সপ্লান্ট করে নতুন দৃষ্টি ফিরে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু অন্য কারণে অন্ধত্বের ক্ষেত্রে চোখ ট্রান্সপ্লান্ট করা যায় না।

বেশিক্ষণ চশমা পরলে পাওয়ার বেড়ে যাবে। তখন আর চশমা ছাড়া চলবেই না : বেশিক্ষণ চশমা পরে থাকলে চোখের কোনো ক্ষতি হয় না বা পাওয়ারও বেড়ে যায় না। বরং চশমায় সবকিছু এতই উজ্জ্বল আর স্পষ্ট দেখায় যে, লোকে চশমা পরতেই ভালোবাসেন।

ট্যারা চোখ আপনাআপনিই ভালো হয়ে যায় : দৃষ্টির অসাম্য, চোখের পাওয়ার বা কোনও অসুখে চোখ ট্যারা হয়ে যায়। উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে লেজি-আই (Lazy Eye) অর্থাৎ এক চোখের দৃষ্টি হ্রাস পেতে পারে যা চশমা দিয়েও ঠিক করা যায় না। শুরুতেই চোখের ব্যায়াম, চশমা বা অপারেশনই ট্যারা চোখের একমাত্র চিকিৎসা।

সকালবেলা খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপর হাঁটা চোখের পক্ষে উপকারী : সকাল বেলা হাঁটাহাঁটি করা স্বাস্থ্যের পক্ষে অবশ্যই উপকারী। কিন্তু শিশির ভেজা ঘাসের উপরে হাঁটার সঙ্গে চোখের স্বাস্থ্যের কোনো সম্পর্ক নেই।

সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ভালো থাকে:
সবুজ শাকসবজি পরিমিত মাত্রায় খেলে চোখের দৃষ্টি ভালো থাকে। কিন্তু সবুজ রঙের দিকে তাকালে চোখের কোনো উপকার হয় কিনা, সে বিষয়ে সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া যায় না।

spot_img
spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img