হোমঅন্যান্যLord Jagannath কাহিনী : নব কলেবর ও বিগ্রহ সমাধি

Lord Jagannath কাহিনী : নব কলেবর ও বিগ্রহ সমাধি

Lord Jagannath কাহিনী : নব কলেবর ও বিগ্রহ সমাধি

সঞ্জয় বসাক
জগন্নাথদেবের (Lord Jagannath) দৈতাপতি (Daitapati) সেবকরাই নব কলেবর ও ব্রহ্ম পরিবর্তনের দায়িত্ব পালন করেন। নবকলেবর ও ব্রহ্ম পরিবর্তন, পুরীর মন্দিরের দুটো পবিত্রতম কর্ম সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করা হয়ে থাকে।

দৈতাপতি সেবকরা এই যুগেও দেবী মঙ্গলার স্বপ্নাদেশ পান। এভাবেই জানা যায়, বিগ্রহ নির্মাণের উপযুক্ত নিমগাছ কোন কোন জায়গায় পাওয়া যাবে। আর নবকলেবরের সময় ব্রহ্ম পরিবর্তন সাধারণত রাতে হয়। অবশ্য তা তিথি, নক্ষত্র বিচার করেই করা হয়।

পুরীর মন্দিরের (Puri Temple) প্রাক্তন এক প্রশাসককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ব্রহ্ম বস্তুটি কি জিনিস। তিনি বলেন, “ব্রহ্ম যে কী জিনিস তা কেউ জানে না। ব্রহ্ম পরিবর্তনের কাজটি একজন দৈতাপতি সেবকই করেন, যখন পুরীর মন্দিরে কেউ থাকে না।”

পুরীর মন্দিরের ৪০ কিমি পূর্বে কাকতপুর নামে এক গ্রামে দেবী মঙ্গলার পূজার্চনা করেন একদল দৈতাপতি (Daitapati) সেবক। প্রাচী নদীর তীরে একসময় দেবী মঙ্গলার মন্দির ছিল। বন্যার জন্য ওই মন্দির কিছুটা দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন মন্দিরটি মঠ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেবী মঙ্গলার পুজোর পর দৈতাপতি সেবকরা ওই মঠে নৃসিংহ মন্ত্র, স্বপ্নাবতী মন্ত্র বারংবার জপ করেন। এরপর স্বপ্নাদেশ পাওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার। তারপর চারটি দলে ভাগ হয়ে দৈতাপতিরা বেরিয়ে পড়েন সেই বৃক্ষগুলির সন্ধানে।

এই বিশেষ নিমগাছগুলি খু্ঁজে পাওয়ার পর সেগুলির নিচে তিনদিন ধরে ব্রাহ্মণরা যজ্ঞ করবেন। একে বনযজ্ঞ বলে। যজ্ঞে নৃসিংহদেবের নামে আগুনে ঘৃত অর্পণ করা হয়। যথোচিত পুজো অর্চনার পর গাছগুলোকে কেটে কাঠের গাড়িতে চাপিয়ে পুরীর মন্দিরের কোইলি বৈকুণ্ঠে আনা হয়।

এরপর দৈতাপতি সেবকদের কড়া নজরদারিতে কোইলি বৈকুণ্ঠের নির্মাণ মণ্ডপে নতুন দারু বিগ্রহের নির্মাণ পর্ব শুরু হয়। যাঁরা (চারজন) বিগ্রহগুলো তৈরি করেন, তাঁদের বিশ্বকর্মা বলা হয়। এঁরাও দৈতাপতি সেবক। বিগ্রহ নির্মাণ শুরুর আগে আরও একবার পুজো হয়। বিগ্রহগুলো নির্মাণের জন্য মোট ১৩ দিন সময় দেওয়া হয়।

বিগ্রহ নির্মাণ পদ্ধতি অনুযায়ী জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রার শ্রীঅঙ্গগুলোকে চার/পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলি হল, শ্রীমুখ, হিয়া (হৃৎপিন্ড), পরিধাপানা (কোমর) ও শ্রীপায়ার (শ্রীচরণ)।

বিগ্রহগুলির ব্রহ্ম পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি শ্রীঅঙ্গে একটি ছোট গর্ত থাকে। শুদ্ধ আষাঢ় মাসের অমাবস্যার দিন চোখ বেঁধে ব্রহ্ম পরিবর্তনের কাজ সুসম্পন্ন করেন এক প্রবীণ দৈতাপতি। শোনা যায়, ব্রহ্ম পরিবর্তন কাজটি করার পর সেই দৈতাপতি বেশিদিন বাঁচেন না।

এদিকে কোইলি বৈকুণ্ঠেই প্রায় ৯ হাত গভীর ও ৬ হাত ব্যাসার্ধের একটি গর্তে রেশমের বস্ত্র ও তুলোর বালিশে তিন বিগ্রহ ও সুদর্শনকে শুইয়ে সমাধি দেওয়া হয়। আরেকটি কথা, কোইলি বৈকুণ্ঠে বিগ্রহগুলোর নির্মাণ শেষ হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে রত্নবেদিতে প্রতিষ্ঠার আগে তাঁদের অবয়বগত আরও কিছু প্রক্রিয়া থাকে।

চলবে…

সঞ্জয় বসাক, জগন্নাথ ভক্ত।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img