শ্যামল সান্যাল : লাট সাহেবের বাড়ির বাসিন্দাদের নিয়ে কত না গল্প-গুজব ছড়িয়ে আছে । এই প্রাসাদের দেওয়ালে কান পাতলে ফিসফিসিয়ে ওরা বলবে। ইংল্যান্ডের রাজবাড়ি, আমেরিকার হোয়াইট হাউস, রাশিয়ার ক্রেমলিন, চিনের তিয়েন আনমেন স্কোয়ার, দিল্লির সাউথ ব্লক বা রাষ্ট্রপতি ভবনের থামের ইটে, দেওয়ালে কত কত গল্প ছড়িয়ে।
ব্যারাকপুরের লাটবাগান, দার্জিলিংয়ের রাজভবন কত দেখেছে,শুনেছে। কিন্তু ওরা বলে না কিছুই। সরকারি আইনে তো ওদের কথা বলা বারণ। রাইটার্স বিল্ডিংসের দেওয়াল, সিঁড়ি, লিফট ঘরেরা মুখ খুললে ..,উঃ কী ভয়ানক ব্যাপার যে হতে পারে । নবান্নের অল্প বয়সেই কত কি যে দেখা, শোনা হয়ে গেল!
স্বাধীনতার তারিখ ১৯৪৭-এর ১৮ জুলাই। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্স একট পাশ হলো। তা কার্যকর হলো ১৫ আগস্ট। ভারত ভাগ করে হলো পাকিস্তান। সব কাজটা গুছিয়ে করতে এদেশে ভাইসরয়ব হয়ে এলেন লর্ড মাউন্টবাটন। সিরিল র্যাডক্লিফের লোকজন মাপজোক করে দুটি দেশের সীমান্ত ঠিক করতে ব্যস্ত। সেই চতুরতা কংগ্রেসের নেতারা বুঝতেই নাকি পারেননি।
জহরলাল নেহরু, গান্ধীজি মতবিরোধের শুরু তখনই। গান্ধী দেশভাগের বিষয়টা নাকি মেনে নিতে পারেননি। ভারত -পাক দুদেশেই জ্বলে উঠল আগুন সাহেবদের পরিকল্পনা মতই। কোটি কোটি মানুষ এই দেশে রিফিউজি হয়ে আসতে শুরু করল। লক্ষ লক্ষ মানুষ খুন হয়ে গেল। গান্ধীজি তখন শান্তি চেয়ে নোয়াখালি,বিহার, কলকাতায় ঘুরছিলেন। আর সেই বিদ্রোহী সুভাষ চন্দ্র বসু, তিনি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
দেশের এই জন্মলগ্নে নেতারা ছিলেন ক্লান্ত । ক্ষমতার গন্ধ পেয়ে গদি দখলের জন্য কামড়, লড়াই শুরু হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী তো জহরলাল , অন্য মন্ত্রী হতে ব্যাপক ষড়যন্ত্র , চক্রান্ত , দলবাজি, ব্যবসায়ীদের খেলার ছবি ইতিহাসের পাতায় আছে।অবশ্য অনেক জল মিশিয়ে সে সব লেখা হয়েছে। আজও সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে মাত্র।
রাজধানী কলকাতা থেকে সরিয়ে নিয়েছিল ইংরেজরা। কিন্তু এই রাজ্য সেদিন ছিল ব্যবসা বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র। তাই বঙ্গের রাজ্যপাল পদটি ছিল লোভনীয় । তখনও এই বাড়ির নাম গভর্নর হাউস। গোরা পুলিশ টগবগে ঘোড়ায় চড়ে পাহারা দেয় ,শহর-রাজভবনের চার পাশ। রাজ্যপালের জুড়ি গাড়ি ছুটে যেত। রাজ্যপাল হতে লাইন পড়ে গেল।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বা অমিত শাহ যেমন আজকের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে এখানে বসিয়েছেন, ঠিক তেমনই নিজের পছন্দের একজনকে বঙ্গে পাঠিয়েছিলেন নেহরু।
কে তিনি , কি করতেন সেই রাজ্যপাল সে গল্প জানে রাজভবনের রাজভবনের থামগুলি।
(চলবে)
কলকাতা যখন সুতানোটি
শেষের স্কেচ :ডেসমন্ড দোয়েগ
সংগ্রহ : শ্যামল সান্যাল