হোমঅন্যান্যশ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা : পর্ব - ৪ - পুরী-ধামের...

শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা : পর্ব – ৪ – পুরী-ধামের ইতিবৃত্ত

শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা : পর্ব – ৪ – পুরী-ধামের ইতিবৃত্ত

সঞ্জয় বসাক, জগন্নাথ ভক্ত

স্কন্দপুরাণে (উৎকল খন্ড) উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ জগন্নাথ পুরীর পরিধি ১০ যোজন (৮০ মাইল বা ১২৮ কিঃমিঃ) অবধি বিস্তৃত এবং বালুকাময় ভূভাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ স্থান উড়্রদেশ বা উড়িষ্যা নামেও খ্যাত। শাস্ত্রে উৎকল দেশকে এ গ্রহের পবিত্রতম স্থান বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

ব্রহ্মান্ড পুরাণে বলা হয়েছে :

বর্ষাণাং ভারতশ্রেষ্ঠঃ দেশানাং উৎকলঃ স্মৃতঃ।
উৎকলস্য সমদেশো দেশো নাস্তি মহীতলে।।
অর্থাৎ “সমস্ত বর্ষসমূহের মধ্যে ভারতবর্ষ শ্রেষ্ঠ। সমস্ত দেশের মধ্যে উৎকল দেশ বা উড়িষ্যা শ্রেষ্ঠ। এই গ্রহে উৎকল দেশ বা উড়িষ্যার মতো অন্য কোনো দেশ নেই।”

উড়িষ্যার পুরী-ধাম উৎকল নামে খ্যাত। এটি রুশিকুল্য নদী ও মহানদীর মধ্যবর্তী প্রদেশে অবস্থিত। আগে এটি উৎকল নামে পরিচিত ছিল।
স্কন্দপুরাণে উৎকল প্রদেশের মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। ঐ পুরাণ অনুসারে, দক্ষিণ মহাসাগরের তটদেশে স্থিত উৎকল পরম পবিত্রকারী স্থান।

গোটা রাজ্যে বহু মন্দির ও তীর্থ বিরাজিত। উৎকল দেশে বসবাসকারী জনগণ সদাচারে দৃষ্টান্ত স্থানীয়।
সেখানকার ব্রাক্ষণগণ সর্বদাই শাস্ত্র অধ্যয়ণ ও যজ্ঞ সমাদানে নিরত। সৃষ্টির শুরুতে যজ্ঞকর্ম ও বেদপাঠ উৎকল হতে উদ্ভব হয়েছিল। এই প্রদেশে অষ্টাদশ বিদ্যার মহাসাগর স্বরূপ বলে বিবেচিত। শ্রীনারায়ণের আজ্ঞায় উড়িষ্যার প্রতি গৃহে লক্ষীদেবী বিরাজ করেন।

এই রাজ্যের মানুষ অত্যন্ত বিনীত ও স্বভাবগতভাবে লজ্জাপরায়ণ। তাঁরা রোগ-ব্যাধি ও মনোবিকার হতে মুক্ত। তাঁরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তাঁদের পিতামাতার সেবা করে থাকেন। তাঁরা অত্যন্ত সত্যপরায়ণ এবং বিষ্ণুর প্রতি ভক্তিমান। উৎকলের মানুষ অপরকে সহ্য করা ও নানা কল্যাণ মূলক র্কম করে তৃপ্তি লাভ করেন। লোভ, দৃষ্টিভাব ও প্রতারণা সেখানে অনুপস্থিত।

একসময় উৎকলবাসী ভগবৎ-কৃপায় অত্যন্ত দীর্ঘায়ু ছিলেন। নারীগণ ছিল পতিনিষ্ঠ। ক্ষত্রিয়গণ সাধারণ মানুষকে রক্ষারূপ স্বর্ধম আচরণ সর্বদা নিয়োজিত থাকতেন। তাঁরা অত্যন্ত দানব্রতশীল ও যুদ্ধে পারদর্শী ছিলেন। তাঁরা প্রচুর যজ্ঞের আয়োজন করতেন এবং এ জন্য প্রচুর দক্ষিণা প্রদান করতেন।

যখন উৎকল দেশের এই রকম ক্ষত্রিয়ের গৃহে কোন অতিথিদের সমাগম হত, তাঁরা সেই অতিথিদেরকে আশাতীতভাবে বহু বহু উপকারে পরিতুষ্ট করতেন। বৈশ্যগণ কৃষিকর্মে, গোরক্ষা ও বাণিজ্য সুন্দরভাবে নিয়োজিত থাকতেন। তাঁরা তাদের ভক্তি ও ঐশ্বর্যের দ্বারা সর্বদা ভগবান, গুরুদেব ও ব্রাক্ষণগণের সেবা করতেন। কোনও ভিখারী উৎকলের কোনও বৈশ্যের গৃহে গেলে , সে এত ভিক্ষা পেত যে, তাঁর আর অন্যের গৃহে যাবার প্রয়োজন হত না।

উৎকলের শূদ্রগণ গীতবাদ্য, কলাবিদ্যা ও শিল্পকর্মে অত্যন্ত সুনিপুণ ছিলেন। তাঁরা অত্যন্ত বাগ্নী, সুবক্তা ছিলেন। তাঁরা ছিলেন ধার্মিক ও দান পরায়ণ এবং সর্বদাই তাদের কায়িক শ্রম, মন, বাক্য এবং ধনসম্পদ দ্বারা তাঁরা ব্রাক্ষণগণের সেবা করতেন। এমনকী বর্ণসংকরগণও তাঁদের পদমর্যাদা অনুসারে ধর্মাচরণ করতেন।

পূর্বে, বড় ঋতুর পর্যায়ক্রমিক আবির্ভাব ক্ষেত্রে কোনও অসামঞ্জস্য ঘটত না। অসময়ে বৃষ্টিপাত হত না। বৃষ্টির জলে বা প্লাবনে কখনো শস্যাদি নষ্ট হত না। বায়ু কখনও মানুষকে নির্যাতন করত না এবং কেউই ক্ষুধায় কষ্ট পেতেন না। পৃথিবীতে যা কিছু পাওয়া যায় উৎকলে তা সবই সুপ্রাপ্য ছিল।

(চলবে)

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img