হোমভ্রমণভ্রমণ কথা : বড়দিনে বাংলার 'গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন' অভিযান

ভ্রমণ কথা : বড়দিনে বাংলার ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ অভিযান

ভ্রমণ কথা : বড়দিনে বাংলার ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ অভিযান

দেবস্মিতা নাগ
এক বিরল প্রাকৃতিক আশ্চর্য হিসেবে বাংলার পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গনগনি। শিলাবতী নদীর খাত গনগনিতে প্রায় একটি গিরিখাতের আকার নিয়েছে। এর গভীরতা, বিচিত্র আকার ও ভৌগোলিক গঠনের অদ্ভূত সাদৃশ্যের জন্যেই এর নাম বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।

নদীর চরে রোদে পিঠ দিয়ে বড়দিনের চড়ুইভাতির অভিজ্ঞতা তো অনেক বাঙালিরই আছে। কিন্তু ঘর থেকে মাত্র দু পা এগিয়ে খোদ গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মতন জায়গায় যাওয়ার কাছাকাছি একটা অনুভূতি পাওয়ার অভিজ্ঞতা কজনেরই বা হয়। সেখানে গেলে বোঝা যাবে, গনগনি যাঁরা দেখে এসেছেন কেউই অত্যুক্তি করেননি।

জায়গাটা এক ঝলক দেখে মনে হয়, কোনও বৌদ্ধ বিহারের ভগ্নাবশেষ জায়গায় জায়গায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কোনও অঞ্চলকে দেখে আবার মনে হয় বুঝি, জর্ডনের পার্বত্য প্রস্তর শহর, কোনও কোনও টিলার চূড়া দেখে আবার চট করে মনে পড়ে যায়, মিশরের পিরামিডের কথা। সে এক আজব প্রাকৃতিক স্থাপত্য।

স্থানীয় পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, ভীম এখানেই বকাসুর বধ করেছিলেন। ভীমের সঙ্গে বকাসুরের সেই প্রচন্ড যুদ্ধের সময় উভয়ের পায়ের চাপে এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির এই ভগ্নদশা হয়। প্রকৃতপক্ষে এই খাত সৃষ্টির কারণ হলো, শিলাবতীর জল ও বায়ুর ক্ষয়কাজ।

এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক মূল্যও আছে। চুয়াড় বিদ্রোহের কান্ডারী অচল সিং এই লাল ল্যাটেরাইট মাটির গুহাগুলিতেই গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। পরে ইংরেজদের হাতে তিনি ধরা পড়েন এবং এইখানেই তাঁর ফাঁসি হয়। বর্তমানে তাঁর স্মৃতিতে গড়বেতায় অচল সিং চিলড্রেন্স পার্ক, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও একটি স্টেডিয়াম রয়েছে।

গনগনি যেতে গেলে সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ধরে গড়বেতা পৌঁছে যে কোনও টোটো গাড়ি ভাড়া করে নিলেই পৌঁছনো যাবে। পথে পড়বে আমলাগোড়া ফরেস্ট রেঞ্জ অথবা সরাসরি কোনও প্রকান্ড হাতির সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়ে যেতে পারে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পথে।

এক পাল হাতির জল খাওয়ার জায়গাটা ঘুরে দেখে আসলেও মন্দ হয় না। গড়বেতায় একটা রাত কাটানোর মত হোটেলের সুব্যবস্থা অনেকেই আছে।সাত মাস গৃহবন্দি থাকার পর একান্তে এক পশলা নদীর বাতাসে ডুব দিতে বড় দিনে রাঙামাটির পথ ধরে সবুজ বনের ধারে এই অপরূপ নদী খাতে চলে আসলে মুক্তির স্বাদটা বড়ই প্রাঞ্জল বোধ হবে।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img