দেবদাস কুণ্ডু
কতো লেখক কতো শিল্পী
এঁকেছেন মানুষের ছবি
গঙ্গা অজুর্ন বিবর
আমি দেখেছি মানুষ সুন্দর।
কেন এমন হচ্ছে? কি কারণে সে এমন আচরণ করছেন? বুঝে উঠতে পারছেন না সুদিনবাবু।
দিন দিন বন্ধু, পরিচিত লোকজন, আত্মীয় স্বজন, এমন কি নিজের স্ত্রীর সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে। কেন হচ্ছে? বয়স হয়েছে বলে? ষাট বছর বয়স এমন কি বয়স? এখনই কেন কথায় কথায় উত্তেজিত আর অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন?
কেউ কেউ বলছে, ‘আপনার হরমোনে গন্ডগোল শুরু হয়েছে।’
‘কি রকম?’
‘দেখুন আমাদের শরীরে দু ধরনের হরমোন কাজ করে।’
‘কি রকম? একটু ভেঙে বলুন।’
‘ব্যাড হরমোন আর গুড হরমোন। আপনার শরীরে গুড হরমোন বন্ধ হয়ে গিয়ে ব্যাড হরমোন বেশি বেশি নি:সরণ হচ্ছে।’
‘তাই বুঝি?’
‘বুঝি না। এটাই সত্যি।’
‘মুক্তির উপায় কি?’
‘হরমোন থেরাপি। ডাক্তার দেখান।’
সুদিনবাবু এ কথায় গুরুত্ব দিলেন না। আজকাল সবাই বিনা পারিশ্রমিকে উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে, যে বিষয় সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই। সেটা ফলো করতে গেলে বিপদ আরো বেড়ে যায়। তার এর আগেও এই অভিজ্ঞতা হয়েছ। কিন্তু অশান্ত বাতাবয়নে তার দিন কাটতে লাগলো। কিছুই ভালো লাগে না। মন বিষাদে ভরা। খাবার রুচি উঠে গেছে। রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে।
আজ সকালে ঠিক করলেন, যাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে, তাদের সকলের বাড়ি যাবেন।
এখন সকাল ৯টা। সুদিনবাবু হেঁটে চলে এলেন তের নম্বর তেলেঙ্গাবাগান লেনে। এটা বিভাষের বাড়ি ।তার প্রিয় বন্ধু। একবছর কথা নেই। ঝগড়ার কারণে।
বেল বাজালেন সুদিনবাবু।
খুলল বিভাষের ছেলে রতন।
‘বাবা আছে?’
‘হ্যাঁ। বাবা সুদিন জেঠু ডাকছে।’
তাকে দেখে বিভাষ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল দরজার কাছে।
‘ঘরে ঢুকতে বলবি না?’
বিভাষ নড়ে উঠলো। শীতল গলায় বলল, ‘আয়। বস।’
‘সেদিন ঝগড়া করাটা আমার ভুল হয়ে গেছে। ঐ ঘটনা ভুলে যা। আমরা আবার আগের মতো বন্ধু হয়ে গেলাম। ফোন করবি। বাড়ি আসবি। জমিয়ে আড্ডা দেবো কেমন?’
‘চা খাবি তো?’
‘না। এখন সময় নেই। অনেকের বাড়ি যেতে হবে যে। ‘উঠলাম, ভালো থাকিস। সুখে থাকিস।’
পনেরোটা বন্ধুর কাছে গিয়ে এই কথাই বলে এলেন সুদিনবাবু। বাকি গুলি পরের দিন সারলেন। আত্মীয়র বাড়ি গেলেন। তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। বাড়িতে আসতে বললেন। সকলকে ডেকে একদিন খাওয়াদাওয়া করবেন তার ডেট বলে দিলেন।
ফেরার পথে হাতিবাগান নামলেন। তন্তুজ থেকে একটা ভালো শাড়ি কিনলেন। স্ত্রীকে দিতে সে চমকে গেল। বলল, ‘কি ব্যাপার? আমার জন্য হঠাৎ শাড়ি! বিয়ের এতো বছর পর আজ হঠাৎ শাড়ি আনলে কেন? সব সময় তো ঝগড়া করছো।’
‘আর ঝগড়া নয়। এবার শুধু ভালোবাসা।’
‘তাই বুঝি? যদি এমনটা হয় তবে খুব ভালো।’
‘যদি কেন? এটাই এখন থেকে সত্যি।’
স্ত্রী হঠাৎ মুখ বাড়িয়ে সুদিনবাবুর গালে চুম্বন দিলো।
সুদিনবাবুর মনে হলো, অমৃত। কি অপূর্ব স্বাদ!
‘কি গো এখনও ঘুমোছো? বাজার যাবে কখন? ‘
স্ত্রীর মৃদু ঠেলায় ঘুম ভেঙে গেল। সুদিনবাবু বুঝলেন, এতক্ষণ তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন।
মনে মনে বললেন, এমনটা যদি হতো, জীবনটার রঙ পাল্টে যেতো।