হোমভ্রমণKolkata : ফ্রম চায়না টু ক্যালকাটা

Kolkata : ফ্রম চায়না টু ক্যালকাটা

Kolkata : ফ্রম চায়না টু ক্যালকাটা

শ্যামল সান্যাল : চিন China) থেকে কলকাতায় (Kolkata) চিনের মানুষদের আগমন হয়েছিল ইংরেজ, ডাচ (Dutch), ফরাসিদের (French) অনেক আগেই। তখন তো কলকাতার জন্মই হয়নি। এই শহরের বয়স তো মাত্র ৩০০র কিছু বেশি। ইংরেজদের দেওয়া নাম। কালকুত্তা গোছের কিছু একটা বলত ওরা। কালীঘাট আজ মমতা ব্যানার্জির (Mamata Banerjee) জন্য বিখ্যাত বিশ্বে। সেদিনও কালীমন্দির ছিল, এক ঘন জঙ্গলে ঢাকা। গঙ্গা বয়ে যেত, যা আজ আদি গঙ্গা নামে একটা নালা।

চিন থেকে পেটের দায়ে বহু মানুষ পাহাড়, বন, নদী ডিঙিয়ে এই দেশে এসেছিল। দক্ষিণ ভারত ও এই বঙ্গে ওরা আস্তানা গেড়েছিল। মানে সেই গরিব চিন থেকে এখনকার পরিযায়ীদের মত।

এই ব্যাপারটা নিয়ে ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে।গবেষণা হয়েছে। কিন্তু দুদেশের সাধারণ মানুষের তা বিশেষ জানা নেই। কলকাতার কাছেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সুন্দরবন লাগোয়া একটা বাদা এলাকায় ওরা আস্তানা করেছিল। বন কেটে বসতি। ওখানে একটা কালীমন্দিরে অনেককাল আগে থেকেই পুজো হত।

কেউ কেউ মনে করেন ডাকাতদের দল কালী পুজো দিয়ে ডাকাতি করতে যেত। চিনারা দিব্যি ভিড়ে গিয়েছিল পুজোয়। ওদের দেশে এসব পুজো পার্বণের বালাই ছিল না। আজও নেই। এরপরে চিনেরা ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার টেরিটিবাজার অঞ্চলে। চিনে বাজার তো সবাই চেনেন।

লালবাজারের পিছনে ও ট্যাংরায় ওরা বাস শুরু করেছিল সেই কবে। চিনে পাড়া বলে তো ট্যাংরা বিখ্যাত। ওখানেও কালীপুজো করে চিনের লোকেরা। দারুণ খাবার, চামড়ার জিনিসে জন্য সারা দেশের মানুষের কাছে এই এলাকা পরিচিত। চিনে ভাষায় খবরের কাগজ এখান থেকেই বেরোতে শুরু করে। ওদের নিজস্ব ইস্কুল চালু হয়।

দাঁতের ডাক্তার হিসেবে অনেক চিনা কলকতায় চেম্বার খুলে ফেলল। খুব ভিড় হত। এখনও দু একটা চেম্বার আছে। কাঠের কাজের ভালো মিস্ত্রি বলে এদের সুনাম ছিল। ভাষার সমস্যার জন্য এদের সঙ্গে কলকাতার ভাব ভালোবাসা জমতে দেরি হয়েছে।ওরা আস্তে আস্তে হিন্দি, ইংরেজি শিখে নেয়। এখন তো দুটো ভাষাই খুব ভালো বলে।

কিন্তু ঘটনা হল এরা কোনওদিন চিনে যায়নি। বংশ পরম্পরায় এখানেই থেকে গেছে। চিনে জুতো বেচে, খাবার খাইয়ে চলেছে। এদের নিয়ে ঝামেলা শুরু হয় চিন -ভারত যুদ্ধের সময়ে। সবাইকে চিনের গুপ্তচর ধরে নিয়ে এদের নানা ভাবে হেনস্থা করতে আরম্ভ করে পুলিশ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থারা।ব্যবসা, চাকরির সুযোগ কমে যেতে শূরু করায় এদের সন্তানরা ভিনদেশে পাড়ি দিতে আরম্ভ করল। এখন মোটামুটি ২০০-৩০০টি চিনা পরিবার টিঁকে আছে কলকাতায়।

রবীন্দ্রনাথ চিনে গিয়েছিলেন, রাশিয়ার মতই। রাশিয়া ও চিন ভ্ৰমণ সম্পর্কে তাঁর দুটি বিখ্যাত ভ্ৰমণ কাহিনী আছে, বিশ্ব ভারতী প্ৰকাশনার। উৎসাহী পাঠকরা পড়তে পারেন।

চিন-ভারত সম্পর্কের ব্যাপারটা দেখতে তো পিছিয়ে যেতে হয় ভারতের সম্রাট সেই বাবরের কালে। মঙ্গোলিয়ান ছিলেন তিনি। মোঙ্গলরা চিনের মত ভারতটাও দখল করেছিল। বাবর ছিলেন মোঙ্গল, কিন্তু ভারতের সম্রাট হিসেবে তিনি মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে যান।

এই সময়টা ছিল ১৪ শতকের গোড়ার দিক। হিসেব করলে দাঁড়ায় প্রায় ৭০০ বছর। নথিপত্র তাই বলে। একই ভাবে এদেশের মানুষ সেই সময় থেকেই চিনে যাতায়াত করছেন। তবে দুদেশের সম্পর্কের গভীরতা কোনওদিন ছিল না। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ তার প্ৰমাণ। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিং-এর সঙ্গে বেশ দহরম মহরম করেছিলেন ।কিন্তু বরফ গলেনি পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে ।
কেন এই অবস্থা?

ক্রমশ…

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img