ড. কল্যাণ চক্রবর্তী
জনসংখ্যার চাপে কমছে খালি জমির পরিমাণ। গড়ে উঠছে বড় বড় অট্টালিকা। কলকাতা সহ বিভিন্ন শহরে বহু কংক্রিটের ছাদ পড়ে রয়েছে অনাদরে, অব্যবহারে। অফুরন্ত সূর্যালোক, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও প্রাকৃতিক সম্পদের যথার্থ ব্যবহার আমরা করতে পারছি কি? অব্যবহৃত ছাদগুলি কেন সবুজে ভরে উঠবে না? কেন সৌরবাতির ব্যবহার বাড়বে না?
নির্মাণের ছাড়পত্র পেতে হলে, ছাদে বাগানের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হোক। সেইসঙ্গে আবশ্যিকভাবে জল ধরে রাখার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
ছাদ-বাগান তৈরি করতে হলে, বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে, তা না হলে মাটির চাপ নিতে পারবে না ছাদগুলি। জল চুঁইয়ে কংক্রিটের ক্ষতি হবে। সব ধরণের গাছও ছাদে লাগানোর উপযুক্ত নয়। এসব নিয়েই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার অনুষদে বিশেষ পাঠক্রম গ্রহণ করা হোক, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সিভিল ও আর্কিটেকচার কোর্সকে এ ব্যাপারে উপযুক্ত ছাত্র-প্রকৌশলী তৈরি করতে ঢেলে সাজানো হোক।
আর তৈরি করা হোক ছাদ-বাগান পরিচর্যার জন্য হাজার হাজার বাগানী, যাঁরা মাসিক মাসোহারার ভিত্তিতে বাগান পরিচর্যার নিত্য দিনের দায়িত্ব নেবেন, জল দেবেন, জৈব সার দেবেন, চারা তৈরি করবেন এবং ফসল রক্ষা করবেন। একজন বাগানী কলকাতায় বেশ কয়েকটি বাড়ির ছাদ-বাগান দেখভালের দায়িত্ব মাসিক চুক্তিতে গ্রহণ করলে নিজের পারিবারিক ভরণপোষণ করতে সক্ষম হবেন। কলকাতায় এই মুহূর্তে প্রায় ৫০০ জনকে বাগান তৈরির প্রশিক্ষণ দিলে এবং মানুষের/সরকারের/পুর-প্রশাসনের উৎসাহ থাকলে, তাদের কর্মসংস্থান সম্ভব।
সারা রাজ্যে এভাবে কয়েক হাজার ছাদ-বাগানীর কর্মসংস্থান হবে, সেইসঙ্গে কয়েকশো ছাদ-প্রকৌশলী এবং ছাদ-বাগিচাবিজ্ঞানীর কর্মসংস্থান হবে। সারা দেশের নিরিখে এই কর্মসংস্থান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আশায় রয়েছি, শহরের লৌহ-লোষ্ট্র ছাদে রক্তকরবী ফুটবে। দৈনিক আনাজের কিছুটা ছাদ থেকেই আসবে। “নিশিদিন ভরসা রাখিস হবেই হবে/ওরে মন হবেই হবে।”
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক।