হোমPlot1R G Kar-এ আগেও একাধিক রহস্যমৃত্যু, জট খুলতে ব্যর্থ পুলিশ

R G Kar-এ আগেও একাধিক রহস্যমৃত্যু, জট খুলতে ব্যর্থ পুলিশ

R G Kar-এ আগেও একাধিক রহস্যমৃত্যু, জট খুলতে ব্যর্থ পুলিশ

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। পথে নেমেছেন সব শ্রেণির মানুষ। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও এই হাসপাতালে একাধিক রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের মধ্যে অবৈধ ওষুধের কারবার, মাদক চক্র, যৌনকর্মীদের ব্যবহার করা সহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে।

সৌমিত্র বিশ্বাসের রহস্যমৃত্যু: আর জি করের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন সৌমিত্র। ২০০১ সালের ২৫ অগাস্ট এই মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়।  কোনও তদন্ত ছাড়াই কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি জানিয়ে দিয়েছিল, এটি আত্মহত্যার ঘটনা।  কিন্তু সৌমিত্রর পরিবার এবং তার অনেক সহপাঠী সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।

সৌমিত্রর মা এবং তাঁর কয়েকজন সহপাঠী অভিযোগ করেছিলেন, কলেজ হস্টেলের মধ্যে এক পর্নোগ্রাফি চক্র চলত। হস্টেলের ঘরে অশ্লীল ছবির শ্যুট করা হত। সেই সঙ্গে চলত সেক্স ব়্যাকেট। এমনকি মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মতো জঘন্য বিষয়ও এর সঙ্গে জড়িত ছিল অভিযোগ।

বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী দাবি করেছিলেন, সৌমিত্র এই সব কুকীর্তির ফাঁস করে দিতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁকে হত্যা করা হয়। কলকাতা হাইকোর্ট সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। অরোমিতা দাস এবং অমিত বালা নামে সৌমিত্রর দুই সহপাঠীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে এই রহস্য মৃত্যুর কোনও কিনারা হয়নি।

অরিজিৎ দত্ত কি সত্যিই আত্মঘাতী হয়েছিলেন? ২০০৩-এর ৫ ফেব্রুয়ারি। দিনটি ছিল সরস্বতী পুজোর আগের দিন। আবারও আর জি করে মৃত্যু।  ‘আত্মঘাতী’ হয়েছিলেন অরিজিৎ দত্ত নামে এই হাসপাতালের ২৪ বছরের এক হাউস স্টাফ। পুলিশ জানিয়েছিল, বীরভূমের সিউড়ির সন্তান অরিজিৎ প্রথমে তাঁর হাতে অ্যানাস্থেশিয়ার ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন। তারপর অবশ হয়ে যাওয়া হাতের শিরা একটি ব্লেড দিয়ে চিড়ে দিয়েছিলেন। এরপর, একটি সার্জিক্যাল কাঁচি দিয়ে হাতের শিরা কেটে দেন। এবং  সবশেষে মেইন হস্টেলের ছাদ থেকে নীচে ঝাঁপ দেন। 

পুলিশ কোনও সুইসাইড নোট খুঁজে পায়নি।  কেন অরিজিৎ আত্মহত্যা করলেন, তারও কোনও জানাতে পারেনি পুলিশ।  শেষ পর্যন্ত পুলিশ ব্যর্থ প্রেমের ইঙ্গিত দিলেও, নিশ্চিতভাবে এই মৃত্যুর কোনও কারণ জানাতে পারেনি।

গৌতম পালের অস্বাভাবিক মৃত্যু: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন গৌতম পাল। ২০১৬-র ২৪ অক্টোবর, দক্ষিণ দমদমের ভাড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ৫২ বছর বয়সী এই চিকিৎসকের পচা গলা দেহ। দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে, এক তলার ঘরের বিছানা থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ।  কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি।

পুলিশ অনুমান করেছিল, আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে, মৃত্যুর কারণ নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেনি।

দরজাটি ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তাই বাইরের কারোর জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিল পুলিশ। তদন্তকারীরা তাঁর ঘরের মেঝেতে রক্তের দাগ এবং তাঁর মুখে কিছু আঘাতের চিহ্ন পেয়েছিলেন। এই মৃত্যুও রহস্যই রয়ে গিয়েছে।

পৌলমী সাহার মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন: ২০২০ সালের ১ মে। তখন করোনাকাল চলছে। সকাল ১১টায় হাসপাতালের ষষ্ঠ তল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন দ্বিতীয় বর্ষের স্নাতকোত্তর স্তরের ট্রেনি পৌলমী সাহা, এমনটাই  জানিয়েছিল পুলিশ।

বন্ধু এবং সহকর্মীরা বলেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে কোভিড ক্লিনিকে কাজ করার কারণে সম্ভবত বিষণ্নতা গ্রাস করেছিল তাঁকে। তবে এক্ষেত্রেও কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি।

শুভ্রজ্যোতি দাসের মৃত্যু, ওষুধের ওভারডোজ নাকি অন্য কিছু? ঘটনাটি ২০২৩ সালের। আর জি করের ইন্টার্ন ছিলেন শুভ্রজ্যোতি। এই হাসপাতাল থেকেই থেকেই এমবিবিএস করার পর,  ইন্টার্নশিপ করছিলেন তিনি। কাকার সঙ্গে নিমতায় থাকতেন। নিমতার বাড়ি থেকেই তাঁকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে আর জি করে নিয়ে এসেছিলেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো যায়নি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন,  অবসাদ কাটানোর ওষুধ বেশি মাত্রায় খেয়ে ফেলাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু, তিনি নিজেই কি অতগুলি ওষুধ খেয়েছিলেন? নাকি কেউ তাঁকে খাইয়ে দিয়েছিল?  এই ক্ষেত্রেও কোনও সুইসাইড নোট পায়নি পুলিশ।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img