দেবাস্মিতা ঘোষ
মোগলাই খানার মধ্যে সেরাটি হল বিরিয়ানি। সেই বিরিয়ানির আবার রকমফের আছে। খোদ ভারতেই তার খান পঞ্চাশ প্রকারভেদ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এরই মধ্যে অন্যতম সেরা বিরিয়ানি হল, কলকাতার বিরিয়ানি (Biriyani)। সেই প্লেটের বৈশিষ্ট্য হল, এতে মাংসের টুকরো ছাড়াও থাকবে একটি স্বাস্থ্যবান আলু ও ডিম।
কলকাতার বিরিয়ানি বলতে প্রথমেই যে দোকানটির কথা সবার আগে মনে পড়ে, সেটি হল সিরাজ (Siraj)। ১৩৫ নম্বর পার্ক স্ট্রিটে, মল্লিকবাজার ক্রসিংয়ের কাছের সিরাজ রেস্তোরাঁটি সম্প্রতি ইনট্যাক-এর “হেরিটেজ” শিরোপা পেয়েছে। কিন্তু এর অনেক আগে থেকেই ভোজনরসিক বাঙালি এখানকার বিরিয়ানিকে সেরার তকমা দিয়ে দিয়েছে।
১৯৪১ সালে ভারত ছাড়ো (Quit India) আন্দোলনের প্রাক্কালে বিহার থেকে বাংলায় এলেন নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের খাস বাবুর্চির বংশধর মহম্মদ শামসুদ্দিন সঙ্গে নিয়ে এলেন মহম্মদ আরশাদ ও মহম্মদ হুসেনকে।এই ত্রয়ীর সমবেত উদ্যোগেই গড়ে ওঠে এক মোগলাই রেস্তোরাঁ। বাঙালির পাতে খাস মোগলাই খানার পাকা জায়গা করে দিল দোকানটি।
১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা উত্তরকালে “সিরাজ গোল্ডেন রেস্তোরাঁ” নামে নামাঙ্কিত হয় সেটি। সিরাজ-প্রিয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকাটিও বেশ দীর্ঘ। এই তালিকায় নাম রয়েছে ক্রীড়া, শিল্প, সিনেমা, সাহিত্য জগতের বহু প্রথিতযশা ব্যক্তির। আর ডি বর্মন, ফারুক শেখ, আমজাদ খান, মকবুল ফিদা হুসেন, শাবানা আজমি, জাভেদ আখতার, ধোনি, সাবা করিম, শোয়েব আখতার, রণবীর কাপুর, আশিস বিদ্যার্থী, শোভা দে, বিপাশা বসু, সুস্মিতা সেন সবাই এই দোকানের খাবার চেখে দেখেছেন।
সাহিত্যের পাতায় বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে সিরাজের নাম। ৭৫ পার করা সিরাজের হীরক জয়ন্তী উদযাপন হয়েছে মহা সমারোহে। সেখানে মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন উস্তাদ রশিদ খান সহ বহু নামজাদা শিল্পী। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনেও খাবার পাঠিয়েছে সিরাজ। বাঙালির উৎসবে আনন্দে রসনা তৃপ্তির জন্য সিরাজ সর্বদা হাজির ছিল, আগামী দিনেও থাকবে।